দেখতে গিয়ে ছিলাম সাগরের বুকে কষ্ট বেশি নাকি আমার বুকে। আমার বুকের তুলনায় সাগরের বুকের কষ্ট কিছুই না। সাগর তার কষ্ট ঢেওয়ে ঢেওয়ে তীরে আছড়ে পরে কমিয়ে নিতে পারে কিন্তু আমি আমার কষ্ট কোন ভাবেই কমিয়ে নিতে পারি না, পারি না কারো কাছে শেয়ার করতে, পারি না কারো কাছে বলতে। কষ্ট গুলো সুধু বাড়তেই থাকে...।। কেন এমন ...??? 

 ফিরতে ইচ্ছা করছে না, যদি সাগরের মাঝে চীরতরে বিলীন হয়ে যেতে পারতাম, শেষ হয়ে যেতে পারতাম। আর যদি না ফিরতাম। চেনা মানুষ দের কাছে আজ আমি বড্ড অচেনা, সেই অচেনা মানুষ দের কাছে আর যেতে চাই না। আমিতো চেনা হয়ে থাকতে চেয়েছিলাম, তবে কেন আজ অচেনা...??? যদি এখানেই জ়ীবনটা চিরতরে থেমে যেত, যদি চলে যেতাম না ফেরার দেশে... 

 আমার কষ্ট সুধুই আমার...। এই কষ্টের মাঝে বিচরন সুধুই আমার। আমার কোন সঙ্গী নেই, নেই কোন কাধে হাত রাখার মানুষ, হাতে হাত ধরার মানুষ...।। 

কেমন যেন হয়ে গেছি...এখন লিখতে ইচ্ছা হয় না। লিখার অনুভুতি গুলো হারিয়ে যাচ্ছ। এই ভর দুপুরে তপ্ত পিচ ঢালা পথ পেরিয়ে ফিরে এসে কেন আমি লিখছি...? আমি নিঃশব্দ বয়ে চলি। আমাকে কেউ বোঝে না, জানে না। আমাকে কেউ জানেনা, একটুও না। আমার শব্দ আর অনুভূতি বুঝতেও পারে না। সবার মাঝে থেকেও আমি নেই। এক সময় হৃদয়ের চেপে রাখা আর্তনাদ গুলোকে শব্দ দিতাম, লোকে তাও বিরক্ত হতো বলে শেষে লেখাই থামিয়ে দিয়েছি। আমি হতাশ হই প্রায়ই, তখন পাথরের মত বসে থাকি। অথবা দু’হাতের আঙ্গুল গুলো একে অপরের মাঝে প্রবেশ করিয়ে সময় ক্ষেপন করি। আঙ্গুল গুলো প্রবলভাবে অবাধ্য হতে চায় তবু আমি নির্বিকার হতে চাই।

কী হবে লিখে...? অথবা, কী_বা হবে না লিখে? কিছুই হবে না। আমি তো জানি, এই শহরের অন্য সবার মতই আমিও একদিন টুপ করে চলে যাব। অনন্তের জগতে, অজানা জগতে।আমি প্রায়ই নিঃশ্বাস নিই বড় করে, সেই-ই তো পথের শেষ। চলে যাব বলে যখন ভাবি, খারাপ লাগে। মনে হয়, কারো নামে ভুল কথা বলে ফেলেছি কিনা। আমি থাকব না, তখন তাদের হৃদয়ের ক্ষত গুলো আমি মুছে দিতে পারব না।

নইলে আমার এই বেঁচে থাকা, এই প্রতি দিনের নিঃশ্বাস আমার অনেক গুলো দীর্ঘশ্বাসের সমষ্টি। কেউ আমাকে তাচ্ছিল্য করে, কেউ আমাকে খোঁটা দেয়, শারীরিক- মানশিক যন্ত্রণা গুলো আমাকে কাবু করে ফেলে। আমি নির্বিকার বেঁচে থাকি। মাঝে মাঝে আমার জড়তা বড্ড বেশি হয়ে যায়। কেউ আমাকে ‘বাস্তববাদী’ হতে বলে, কেউ বলে কল্পনার ‘রোমান্টিকতা’ ফেলে বাস্তবে পা দিতে। অথচ, আমি একজন মানুষ যে শুধু অনুভব করি দৃষ্টি ছাড়িয়ে একটু বেশি। বাস্তববাদীদের বাস্তব চোখের চাইতে বড় বাস্তব দেখতে পাই। স্বাভাবিকতাকে রোমান্টিক হিসেবে যারা ভাবে তার চাইতে বেশি স্বাভাবিক আমি। আমি আমার এই চোখ নিয়ে বড্ড বিব্রত। কেনই বা এই অনুভূতি আর দৃষ্টি, কেনই এই অসহায় নিস্পৃহা। আমি নিয়ত তাদের সাথেই যুদ্ধ করি। অনেকটা অন্যদিকে তাকিয়ে কাজ করার মতন। আমি আছি, আমি নেই। আমি না থাকার মতই।

কী হবে আমি যদি অন্য সবার মত না হই...? কী হবে যেমন করেই হোক পেরিয়ে যাই এই একটি জীবন। কে সফল হয় ...?  চলে যাওয়াই সব চাইতে বড় বাস্তব।  আমি কখনই ভুলতে পারিনা এগুলো কিছুই আমার নয়। আমার এই শব্দ গুলো হয়ত রয়ে যাবে যেদিন আমি থাকব না। কেউ হয়ত পড়বে আমার কথা, তখন আমি থাকব না। তারা জানবে, আমার হৃদয়ে অনুভূতি ছিলো, যেমনি তাদের আছে। আমি নেই, আমি বাস্তব পৃথিবীতে চলে গেছি। যোগ্যতা বেশি ছিলনা আমার, তবু আমি বেঁচে ছিলাম। আমার ক্ষুদ্রতার ভারে আমি নুয়ে ছিলাম জীবনভর, তবু ছেড়ে দিইনি কিছু। তবে অবাক লাগে, আমার ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে যতটা না আঘাত পেয়েছি, তার চাইতে বেশি পেয়েছি আমার ভিন্নতার কারণে।

লিখতে ইচ্ছা হয় না আর, ক্লান্ত লাগে। ক্লান্ত লাগে নগর জীবন। ক্লান্ত লাগে এই তপ্ত দুপুর, ক্লান্ত লাগে অনুভুতি গুলো । জানি, আমি লিখলেও কিছু হবেনা, না লিখলেও হবে না। ঝরে যাওয়া বৃষ্টির জলধারা,কচু পাতার উপরে পানির ফোঁটা, ভেজা কাক, ভেজা রাস্তায় ছুটে যাওয়া বৃষ্টিস্নাত শিশুর দৌড়ে চলা — এই দৃশ্যগুলো আমাকে আগের মত মুগ্ধ করে না। আমি কি মরে যাচ্ছি...? আমি কি মরেই গেছি ইতো মধ্যে..? মৃত আত্মাকে নিয়ে আমি আর ভাবিনা। আমি আর অপেক্ষার প্রহর গুণিনা। বেঁচে থাকাই আমার কাছে অদ্ভুত এক উত্তেজনা। এই নিঃশ্বাস, এই বাতাস, এই আলো, এই  তপ্ত রোদ সবই আমার বেঁচে থাকার প্রাপ্তি।  এত টুকুই বা পায় ক’জনা..??

শব্দ খড়ার মাঝে এক ফোঁটা জল বড্ড আকাংক্ষিত। কীবোর্ড থেমে রয়, অথচ স্ক্রীনজুড়ে ফাঁকা জায়গা... হৃদয়েও হয়তো। হৃদয় সবচেয়ে অসহায় হয় কখন...? সম্ভবত যখন হৃদয় ভয়ে ভীত থাকে। ভয় খুব শক্তিশালী অনুভূতি। শরীরে কাঁপন ধরে, শীতল স্রোত বয়ে যায়, দমবন্ধ অনুভূতি হয়। তবু জীবন চলে যায়, বয়ে যায়, যেতেই হবে। ভয়ের মতই আরেকটা শক্তিশালী অনুভূতি ভালোবাসা। যদিও এ দুয়ের তুলনা হয় না। দুয়ের উপস্থিতি এক সাথে হতেও পারে, আবার নাও পারে। জানিনা আমি। যা মন চায় লিখছি। না লিখলেও কিছু আসে যায় না, লিখলেও না। আমার লেখা কেউ মন দিয়ে পড়েনা, আমিও কাউকে পড়াই না।
জীবন বড্ড ছোট, এসে থেকে চলে যাওয়া। বিদায় জানিয়ে মাটির নিচে স্থান নেয়া। সবাই কেন চলে যায়, কী করে গিয়ে...? মাটির নিচে কেমন লাগে...? আমার অন্ধকারকে বড্ড ভয় হয়। মাঝে মাঝে আমি চোখেও আঁধার দেখি। তখনো আমার ভয় হয়। ভয়ে মাখামাখি জীবন। তীব্র ভয় নিয়ে বাস করা অবশ্য কম বেশি নিশ্চিত প্রতি জীবনেই।
একটা কথা ছিলো বোধ হয় লেখার, ভুলে গেছি। না হয় নাই  লিখলাম। লিখে কী হবে...?? সবই সময়ের সাথে সাথে পুরোনো হয়ে যায়, ম্লান হয়ে যায়। সব অনুভূতিরাই এক সময় বিরক্তিকর হয়। আমার এটাও হবে। সময়, শুধু পেরিয়ে যেতে দেয়ার। যাও পেরিয়ে যাও। বিদায়... 

দু’চার লাইন লেখাও আপদ। আমি বুঝি, যে কখনো জীবনের বাস্তবতা দেখে নি তাকে যদি বাস্তবতার কথা বলা হয় সে কিছুই বুঝবে না বরং আমাকে পাগল ভাববে, সে বুঝবে না আপনার অনুভূতি। লেখা লেখিটাও অমন।
অনেক না পড়লে আপনি বুঝবেন না কোন লেখা কখন কেমন করে লেখা হয়...। লেখকরা কেমন করে লিখেন, কখন লিখেন, কেন লিখেন...।
সম্ভবত Mark Toyen বলেছিলো- "সে যখন লিখে তখন আসলে তার কলম দিয়ে রক্ত ঝরে। কারো ঝরে আগুন, কারো ঝরে কষ্ট, কারো বিষাদ। ঝরে যেতে থাকে শব্দের প্রতিটি বিন্দুতে, যারা গড়ে তোলে একেকটি অক্ষর।" আপনার লেখা যখন পাঠক ভুল বুঝবে তাও বিপদ। হতে পারে আমার এই লেখাটাও বিপদ ও আপদ। হতে পারে আমার সব গুলো লেখাই বিপদ-আপদ-মুসিবত। হতে পারে জীবনের লেখা-লেখিই আপদ।
অনেক কিছুই হতে পারে। পৃথিবীতে অনেক কিছু হয়। প্রতিটি বিপদে শিক্ষা থাকে, ভীতি থাকে, কষ্ট থাকে, জ্বলন থাকে, আতঙ্ক থাকে, ক্রোধ থাকে, অনুতাপ থাকে, হতাশা ও জেদ থাকে। এসব কিছুর পরেও একদিন টুপ করে কফিনে করে আমরা একের পর এক চলে যাই আমাদের লেপ-তোশক, চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটারের মালিকানা ছেড়ে মাটির নিচে মিশে যেতে।
একদিন আমিও অমনি করে মিশে যাবো। একা…
চার পাশের বিপদ-আপদ, কষ্ট তখন বড্ড তুচ্ছ মনে হবে...

কয়দিন করেই লিখবো লিখবো ভাবছিলাম। ইচ্ছে করেই বসিনি, কারণ বসলেই তো অনেকটা সময় চলে যাবে! এই সময়টুকুও অনেক সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু আসল কথা কী ...? যেটা ভেবে লিখবো ভেবেছিলাম, সেই ভাবনা গুলোর ছিটেফোঁটাও ঠিক এই মূহুর্তে আমার মাঝে নেই।

এই মূহুর্তে আমার মন বড্ড খারাপ। যাকেই কথা গুলো বলতে যাবো– কেউ বুঝবে না জানি। সবাই তার মতন করে বিচার করতে যাবে। অথচ আমার জীবন আর তার অনুভূতি গুলো একদম ব্যতিক্রম। সবার জীবনই ব্যতিক্রম তা জানি। অন্য সময় নানা রকম কথা শোনা যায়, উপদেশ উপেক্ষাও হয়ত সহ্য করা যায়– কিন্তু যখন কিছু নিয়ে হঠাৎ-ই মন খারাপ, তখন এটুকুও অসহ্যবোধ হয়। তাই সবকিছু বাদ দিয়ে লিখতে বসে গেলাম। 
মানুষের গড়ে ওঠায় তার আদর্শের উপস্থিতি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা বারবার উপলব্ধি করছি। ছেলেবেলায় কত অকলঙ্ক ছিলো চিন্তা গুলো! ক্রমে তা কেবলি ফিকে হয়ে এসেছিলো। ফিকে হতে হতে একটা সময় এমন হলো যে সেই সুন্দরের অস্তিত্বটুকুই টের পেতাম না! অথচ ব্যাপারটা এমন না যে পুরোটাই আমার হাতের নাগালের বাইরে ছিলো। হয়ত কিছুটা করার ছিলো আমার, হয়ে উঠেনি। বরং আমি আমার অবস্থার বেশিরভাগটাকেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে পেয়েছিলাম। ক্ষুদ্র জিনিস নিয়ে বেশি চিন্তা আর অর্থহীন কাজের অনেক অভ্যাসকে রপ্ত করেছিলাম নিজের অজান্তেই, স্রোতের বিপরীতে নিজেকে ধরে রাখার যেই প্রচেষ্টা, সেটার অনেক অভাব ছিলো। আর আমি অনেকটাই নিরূপায় হয়ে দেখেছি আমার নিজের ক্রমাগত বদলে যাওয়া। বদলে যাওয়ার চাইতে ক্ষয়ে যাওয়া বললে আরো বেশি সঠিক হবে। সেই ক্ষয়ের ক্ষতিটুকু কত ব্যাপক তা কেবল আমি জানি!
তারপর... অনেক বছর পর যখন নীড়ে ফিরার চেষ্টা করছি মাথা ঠান্ডা করে, তখন এই জীবন নিয়েই কত-শত সমস্যা! এই সমস্যাদের ভীড়ে কখন আমি আবার এই আমি’র দিকে খেয়াল করবো তা-ই বুঝে পাইনা! ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটা দৈর্ঘ্যের জীবনটার পর যে বিশাল ব্যাপ্তির অনন্তকাল অপেক্ষায় আছে– তার চিন্তাও আমাকে মাঝে মাঝেই ভাবায়। কিন্তু খানিক পরেই আবার ভুলে যাই সব! মুক্তি কী করে হবে আমার...? আমি কেন যে ধরে রাখতে পারিনা নিজের সেই লাগামি খানি...!
মাঝে মাঝে যখন হঠাৎ আজকের মতন অস্থির লাগে, যখন নিজেকে নিজে বুঝিয়ে শান্ত করতে পারিনা...। নিজের দুঃখ- কষ্টকে মাঝে মাঝে কারো সাথে শেয়ার করতে ইচ্ছা করে, কারো কাছে বলতে ইচ্ছা করে, কারো উপর  নির্ভারশীল হতে ইচ্ছা করে ... তবে কি আমি স্বার্থপর  হয়ে যাওয়ার পথে...??? না কি এই ইচ্ছা থাকাটা স্বাভাবিক...??? বুঝি না... 

আমার এলোমেলো চিন্তা গুলো বরাবরের মতই অসহায়। অসহায় বোধ, অনুভূতির দল। এতকিছু করে শব্দ পিঞ্জরের মাঝে আটকে পড়া। সময় কেটে যায়, অকৃতজ্ঞ সত্বা তবু সুস্থতার স্পর্শ পায় না।

কবিতা লিখিনা অনেক দিন। লিখতে পারি না।শব্দ গুলো কেমন যেন মিলাতে পারি না । আমি হয়তো অনুভব করতে ভুলে গেছি। হয়তো সব কিছুকেই মানিয়ে নিতে শিখেছি, তাই আর আজকাল কবিতা লিখি না। কবিতায় অনেক কিছু থাকে, অনুভূতি, তীব্রতা, বিষ, ভালোবাসা, অনুভুতি। আমার অতকিছু নেই। আমি নির্বিকার লোক। আঘাত পেয়ে আহত হতে হতে শরীরের অনেক জায়গা যেমন ভোঁতা হয়ে যায়, তেমনি হয়েছে আমার অন্তর।


অনেকদিন বিশাল সুমুদ্রের কাছে যাইনা, সাগরের বিশাল তীর ধরে হাটতে ইচ্ছা করছে । সাগরের বিশালতা দেখে জানতে ইচ্ছা করছে কার বুকে কষ্ট বেশি...?? নাগরিক জীবনের সব ধরণের জঞ্জালে ও জালে আটকে গেছি। চলবে হয়তো মৃত্যুবধি, তবে চলুক...।

অনেকের মুখে শুনেছি মানুষের জীবনে ৮০% বাস্তবতা আর ২০% আবেগ নাকি খুব বেশি জরুরী। কিন্তু আমি কেনো পারছি না সেরকম হতে কার অভাব, কিসের অভাব...?? যা চাই তা পাই না, যদি পাই তাও আবার হারাই। অনেক সময় ভাবি অবাস্তব সব জিনিস নিয়ে যার কোনো আগা - গোরা নেই, শুরু শেষ নেই। তারপরও ভেবে যাই অবিরত ক্লান্তিহীন, ভেবে যাই আনমনে, তাকিয়ে থাকি মূর্ছা যাওয়া চোখে...। 



নিঃসঙ্গ রাতের বুকে সবাই যখন ঘুমে নিশ্চুপ, 
একলা আমি হতাশার কাফনে জড়িয়ে হিসেব মিলাই জীবনের খাতায়। 
যার প্রতি পাতা জুড়ে আছে শুধু ভুলের সমীকরণ, 
পাওয়া না পাওয়ার দাঁড়িপাল্লায় না পাওয়াটাই পড়ে থাকে সীমাহীন এক শূন্যতায়। 
ঠিক যেন আমার মতো একলা একজন। 
বিষণ্ণতার কবরে শুয়ে আমি অপেক্ষায় থাকি, 
কখন ঘুম পাড়ানি মাসী-পিসী এসে জাদুর কাঠি বুলিয়ে দিবে। 
জীবন যুদ্ধে ক্লান্তি আমার দু'চোখে। 
কখন তলিয়ে যাবো নিঃসীম অন্ধকারে, 
কখন আঁধারের কালো চাদর ঢেকে দিবে
আমার সব ব্যর্থতা..।

মানুষমাত্রই নিঃসঙ্গ-হাজারো কোলাহল, চেনা অচেনা লোকের ভিড়ে, উৎসবে আনন্দে, কর্মব্যস্ততায় থাকলেও, মানুষ কিন’ মনের দিকে একাকী-পৃথিবীতে আসে একা এবং বিদায়ও নেয়, সেভাবেই। নিঃসঙ্গতা কী বা কেন বা কোথায় এর উৎস, এর সঠিক ব্যাখা নেই, যদিও বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে মনের।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, ‘যখন মানুষ নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারায়, অথবা যখন মনে করে তার নিজের বিশ্বাস ও আচরণের কোন সার্থকতা নেই অথবা এক ধরনের আদর্শহীনতা বা সংযোগহীনতা কাজ করে তখনই মানুষ নিজেকে আড়াল করতে চায় অথবা নিজেই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে”। আবার অনেকে পারিপার্শ্বিক কারণেও নিঃসঙ্গতায় আক্রান্ত হয়-আশেপাশে কেউ নেই, নির্ভরতার বা ভালবাসার – অতঃপর সে যেন নির্জন দ্বীপের একজন। এমন কি কখনো হয়না? চারদিকে ব্যস্ততা, গুঞ্জন, কোলাহল, আলাপ, কলকাকলি অথচ নিজে যেন এক অপার শূন্যতায়-মনের মাঝে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতার অন্ধকারে যেন ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছি অথচ অনেকেই, স্বভাবে অন্তর্মুখী-কারো সান্নিধ্য তার একাকীত্ব লাঘব করে না বরং মনে নির্জনতার আকণ্ঠ পিপাসা-আর এখানে কাঙ্ক্ষিত সান্নিধ্য শুধুমাত্র একজনের, যে খুব কাছের-সুখের, দুঃখের সঙ্গী এবং নির্ভয় নির্ভরতার নিশ্চিত আশ্বাস।

আজকের দিনটা কেমন যেন লাগছে, কিছুতেই মনটাও বসছে না। সময়টাও যেন কাটছেনা, এবং গানও শুনতে ইচ্ছে করছে না। মাঝে মাঝেই এমনটি হয়ে থাকে। হয়ত সবারই এমনটি হয়ে থাকে মাঝে মাঝে। তখন মনের সমস্ত কষ্টগুলো, সমস্ত ব্যথা গুলো যেন এক হয়ে যায়। সে গুলো নিয়ে শুধু ভাবতেই যেন ভালো লাগে। আর সেই সব ভাবতে ভাবতে বুকের ভিতরটা দুমড়ে-মুচড়ে যন্ত্রনায় একাকার হতে থাকে। তখন মনে হয় যেন, কেউ আমার সঙ্গী হতে চায়না, কেউ আমাকে অনুভব করতে পারেনা, কেউ আমাকে বুঝতে চায়না, কেউ আমাকে বিশ্বাস করেনা, এমন কি কেউ আমাকে ভালোও বসেনা। তখন যেন নিজেই কোথায় হারিয়ে যাই এবং কেমন যেন আনমনা হয়ে পড়ি। কিন্তু ঠিক তখনই নিজের মনের গভীরে শুধু এক জনকেই খুঁজে পাই, আর সেই হলো আমার "একাকিত্ব"

তাই মনটাকে ভালো করার জন্য এককাপ চা একহাতে নিয়ে, অন্যহাতে একটা বই নিয়ে, জানালার পাশে সোফাটায় বসলাম। এবং বইটা পাশে রেখে জানালাটা সম্পূর্ণ খুলে দিয়ে মুক্ত আকাশটাকে অবাক চোখে দেখছিলাম। আর মনে হচ্ছিল যেন কারোর জন্য অপেক্ষা করছি। হঠাৎ পাশে কাউকে যেন অনুভব করলাম এবং কিছু যেন একটা শুনতেও পেলাম। পাশ ফিরে তাকাতেই দেখি পাশে কেউ নেই...শুন্য, ফাঁকা...।।
আর আমিও আমার বই পড়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। আর সে ছিলো আমার নুতন শক্তি, সব চেয়ে প্রিয় বন্ধু, সে আমার "একাকিত্ব"। সত্যিই তাকে আমি প্রচন্ড রকম ভালবাসি। যদিও মাঝে মাঝে তার সাথে আমি আনন্দিত হইনা। তবে যখনই কোন কিছু নিয়ে ভাবতে চাই, কোন কিছু লিখতে চাই কিংবা মন খারাপ হয় ঠিক তখনই আমার এই একাকিত্বটাকে নিয়ে ভীষণ সাচ্ছন্দ্য বোধ করি। কারণ সত্যিই যে, সে আমার চমৎকার একটা বন্ধু।

হয়তবা আপনার প্রিয় মানুষটির সাথে আপনি নেই... অনেক অনেক কারণে আজ আপনারা একে অপরের কাছ থেকে অনেক দূরে ... হয়তোবা, তার প্রতি আপনি এমন কিছু করেছিলেন যা আপনার করা উচিত ছিলনা...আপনার সেই সব ভুলের জন্য কি তাকে একটি বার sorry বলাটা কি আপনার উচিত না... ?? হয়তো আপনি ভাববেন sorry বললে আপনি তার কাছে ছোট হয়ে যাবেন কিন্তু না...।। Sorry বললে কেউ কখনো ছোট হয় না বরং এটা প্রকাশ পায় তাকে আপনি কতোটা Importance দেন, তার উপস্থিতি আপনার কাছে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ ।

হয়তোবা, তার কাছে এখন আপনার সেই sorry এর কোন দাম থাকবে না।
তবুও, আপনার প্রতি তার respect বাড়বে যখন সে ভাববে আজ আপনার সেই সব কাজের জন্য আপনি অনুতপ্ত।
সব সম্পর্কেই মান অভিমান থাকবে।(সম্পর্ক বলতে আমারা এখন শুধু একটি ছেলে আর একটি মেয়ের সম্পর্ককেই বুঝি কিন্তু তা না। সম্পর্ক বলতে বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী এর সম্পর্ক, বন্ধুত্তের সম্পর্কও বুঝায়...।) তাই বলে আপনার প্রিয় মানুষ আগে আপনার মান ভাঙাবে এটা মনে করে বসে থাকবেন না। আপনি যেমন ভাবতেছেন আপনার প্রিয় মানুষটি এসে আপনার মান ভাঙ্গাবে হয়তো সেও ভাবতেছে আপনি এসে তার মান ভাঙ্গাবেন...।


আপনিই বরং আগে গিয়ে মান ভাঙান।দেখবেন এতে আপনার ভালবাসা তার কাছে আরো বেশি প্রকাশ পাবে।

প্রিয়জনের সাথে কখনো দূরত্ব বাড়াবেন না।দূরত্ব বাড়তে থাকলে এমন একটা অবস্থানে পৌছায় যখন আর দূরত্ব কমানোর কোনো উপায় থাকে না।

শত ব্যস্ততার মাঝেও প্রিয়জনের জন্য কিছু সময় রাখুন।তাকে বলুন আপনার ব্যস্ততার কথা।

এতে আপনাদের মাঝে দূরত্ব টা কমে যাবে।আপনার ব্যস্ততা নিয়ে তার কোনো অভিযোগ থাকবে না।


বর্ষার সার্থকতা সে ঝরতে পারে, কাঁদতে পারে। ঝরে গিয়ে কেঁদে কেঁদে সে তার মনের অব্যক্ত কথা প্রকৃতিকে রিমিঝিমি শব্দে শোনাতে পারে। কালো মেঘের আবরণে তার যত কষ্টের দাগ লেগে আছে সবটুকু সে অঝোর ধারায় প্রকৃতির মাঝে বিলিয়ে দিতে পারে। এই পারাটাই তার সুখ, তার সার্থকতা। কিন্তু আমি তো বর্ষার মতো কাঁদতে পারি না! আমি যা পারি তা হলো, গভীর রাতে নিজের দুঃখ-যাতনার স্মৃতি রোমন্থনে দু'চোখের পানি দিয়ে বালিশ ভেজাতে। আমার এই বালিশ ভেজা চাপা কান্না কেউ দেখে না। কেউ শোনে না আমার হৃদয়ের আর্তনাদ। শুনেছি বিশ্বাসে মেলায় বস্তু। সেই বিশ্বাসের উপর ভর করে আমি যাকেই আপন ভেবে নিজের দুঃখ-কষ্টকে তার সাথে শেয়ার করতে চাই, সে কেবল আমাকে সান্ত্বনার বাণী-ই শুনিয়ে দেয়। আমার পাশে এসে দাঁড়ানোর সাহস তার হয় না। হবেই-বা কি করে আমি যে একজন অপূর্ণ মানুষ ! অপূর্ণ বলতে আমি যা বুঝাতে চেয়েছি তা অনেকেই বুঝতে পারবে না বা বুঝবে না।   কোন সুস্থ্য মস্তিষ্কের ব্যক্তি কি চায় তার জীবন কোন অপূর্ণ মানুষরে সাথে জড়াক? না,  চায় না…।

একজন অপূর্ণ মানুষ হওয়া সত্ত্বেও নিজের জীবনটাকে সুন্দরভাবে সাজানোর স্বপ্ন কখনো দেখিনি যে তা নয়। আমার এই মনটাতেও খুব ইচ্ছে জাগে ভালোবাসার স্বাদ পেতে। একটু ভালোবাসা পেলে আমিও যে রচনা করতে পারতাম বিশ্বের মহা কবিদের অপরিচিত সংগীতমালা। অন্তর মাধুরী দিয়ে দূর করতে পারতাম মনে সকল পুঞ্জিভূত কুয়াশা। মহাশূন্যের বুকে উড়িয়ে দিতাম শান্তির পায়রা। নতুন সৃষ্টির গানে হতাম সোচ্চার প্রতিদিন চিরদিন। মাঝে মাঝে ভাবি জীবনে চলার পথে এমন কারোর দেখা কি পাবো না, যার একটু ভালোবাসা পেলে আমার এই ভাঙ্গা জীবনটাকে সুন্দর করে সাজাতে পারবো? এমন কোন মন আছে কি, যে মনটি অন্তত বুঝবে একজন অপূর্ণ মানুষের জীবনে কি পরিমাণ কষ্ট আছে? জানি তেমন মন পাওয়া আমার ক্ষেত্রে অসম্ভব কারণ আমি যে ......! আমাকে কেবল করুণা করা যায়, আপন করা যায় না। কারও আপন হওয়া তো পূর্ণতায় ভরা। অপূর্ণ জীবনে ওসব একেবারে বেমানান। যদি তা বেমানান না হতো তবে কখনো আমাকে বালিশ ভেজা চাপা কান্নায় কাঁদতে হতো না..।

আজ সারাদিন গুমোট মেঘলা। ঝির-ঝির বৃষ্টি… কখনো গুড় গুড় করে মেঘের ডেকে যাওয়া। আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢাকা। ভয়ংকর শব্দে কানে তালা লাগার মতো কিছু মেঘের গর্জন… আর এই মূহুর্তে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। তীব্র বৃষ্টিতে জানালা দিয়ে বৃষ্টির ছাঁট এসে মুখ ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। আমার বিছানাটা জানালার পাশে। সেই জানালা দিয়ে ভেসে আসছে মাটির সোঁদা গন্ধ। বৃষ্টি শুরু হলে এইরকম গন্ধ পাওয়া যায়– মনটা কেন যেন আনচান করে ওঠে…
একটা গল্পের বই পড়ছিলাম। ট্র্যাজেডি– শেষে মূল চরিত্র মারা গেলো। একটা পোস্ট পড়লাম ব্লগে। আরো খারাপ হয়ে গেলো মন। এই খারাপের অনুভূতিতে কেমন যেন কষ্ট মেশানো… এইটার কোন উপশম আমার জানা নেই। বরং নিজেকে খুব একা বলে মনে হচ্ছে। আসলে মনে হওয়ার কিছু নেই; আমি প্রকৃতই একা।এইরকম বর্ষণঘণ দিনে সেই একাকীত্বকে প্রকট করে খুঁজে পাই। এই খারাপ লাগাটাকে কমাতেও মন চাইছে না… এখন প্রায় সব সময়-ই এ রকম হয়…
এরকম ব্যাপারটাকে আমি নাম দিয়েছি “দুঃখ-বিলাস”। যখন মন খারাপ হয়, সেইটা আরো বাড়িয়ে দিতে মনে চায় কখনও কখনও… কেমন যেন নেশার মত লাগে !! থাক না, আর ভালো হওয়ার কী দরকার...??


নিঃসীম পৃথিবীতে কথা বলার মানুষ পাই না বলেই হয়ত কলম ধরলে কলম আমার চিন্তার আগেই এগিয়ে চলে… মনের জানালা গুলো খুলে যায়, আর আমি নিজের ভেতরের বদ্ধ হয়ে থাকা চিন্তাদের অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি দেই। এতক্ষণ, এতদিন যেই অনুভূতিরা গুমরে মরছিল, তাদের আর্তনাদ সইতে না পারলে লিখতে বসে পড়ি। হতে পারি আমি একজন মানুষ হিসেবে খুব সামান্য, কিন্তু একটু প্রশান্তি কে না চায়! আর সেই প্রশান্তি লেখার মাধ্যমেই কিছুটা পাই...
ব্লগ না থাকলে হয়তো আমি আমার "হলুদ রংয়ের ডায়েরিটা" নিয়ে বসে পড়তাম। যদিও ডায়েরিটাতে লিখি না আজ প্রায় ২বছর, তবুও আজ লিখতাম...সত্যি লিখতাম।  উন্মোচিত করতাম মনের ভেতর জমে থাকা কথা গুলোকে…
২২ টি বর্ষা অতিক্রান্ত হয়েছে এই জীবনে। আর একটি মাস পরে পা রাখবো ২২-এ। ক্ষুদ্র এই সময়ের ব্যাপ্তিতে যাদের একটু আপন করে পেয়েছিলাম, তারাই চলে গেছে দূরে। যাকে ভালোবেসে কাছে টেনেছি, সে-ই আমায় ফেলে গেছে দুঃসহ বেদনা দিয়ে। ভুল বুঝেছে, দিয়েছে মিথ্যে অপবাদ। বারংবার নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছি– আমাকে কেন কেউ ভালবাসে না? নাকি বাসে, আমিই কি টের পাইনা...?? কেন আমাকে কেউ কখনো আপন বন্ধু ভাবে না...?? নাকি আমি বন্ধু হওয়ার মতো না...? ? নাকি আমার বন্ধু হওয়ার যোগ্যতা নেই...??

কৈশোরে কিছু বন্ধুদের পেয়েছিলাম আপন করে– তারা আজ জীবনকে সফল করার তাগিদে আমার থেকে দূরে…আমি আবার সে-ই একাকীত্বে। সেই আমি, সেই বৃষ্টিস্নাত দিন। শুধু কিছু স্মৃতি আমার সংগী।আমি ওই স্মৃতিদেরই বুকে জড়িয়ে ধরে আছি। নিজের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বুঝতে চাই কবে আমার মুক্তি মিলবে এই ব্যস্ত জীবনের শিকল থেকে!

এই রকম দিনে বড় স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে মনটা। কত জনকে যে মনে পড়ে! কত কিছু যে মনে পড়ে! কেমন যেন একটা শূণ্যতা ভর করে বুকের মাঝে… এই রকমটা মনে হয় কম-বেশি সবারই হয়…

পরিষ্কার মনে আছে– ছেলেবেলায় এইরকম আবহাওয়া পেলে মুগ্ধ হয়ে দেখতাম, মুখ ভার করে জানালায় গিয়ে দাঁড়াতাম। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে কত-শত ভাবতাম! এলোমেলো, আবোল-তাবোল… খুব ভালো লাগত। স্বপ্ন দেখতাম– নিষ্কলুষ, অকলংক, পবিত্র সেই সব কল্পনা! তবু কত স্বপ্ন বাস্তব হলো! কত নতুন দুঃস্বপ্ন জীবনকে এলোমেলো করে দিলো!!

আমি চেয়ে চেয়ে দেখি! দেখি সবাই কিসের পেছনে যেন ছুটছে… ক্যারিয়ার, চাকুরি, উন্নতি… আরো কত রকমের স-ব শব্দ ভেসে আসে প্রতিনিয়ত কানের পাশে! আমি ওদের মত পারিনা। এতটা চিন্তিত হতে আমার ইচ্ছে করেনা। আমিতো আমার কাজ করছিই… তাহলে কেন প্রতি মূহুর্তে এত সচেতন হতে হবে জীবিকার চিন্তায়?
আমি হয়তো ওতটা বাস্তববাদী নই। আর তাই হয়ত আমি জীবন-যুদ্ধ থেকে ছিটকে পড়তে পারি… আর তাই হয়ত আমার দিকে কেউ চেয়ে দেখে না… আমি কারও পাশে থাকলে কারো ভাললাগবে, তার সময় ভালো কাটবে, এটা হয়তো কেউ বিশ্বাস করে না… — এইরকম কত-শত চিন্তাই তো মাথায় আসে!!
আমি শুধু ভেবেই চলি। ভেবে চলি আমায় একদিন চলে যেতে হবে এই প্রকৃতি ছেড়ে, যেতে হবে এই পৃথিবী ছেড়ে… তখন আমি আর এইভাবে বৃষ্টির পানিতে মুখ ভেজাতে পারব না… আমি আর মাটির সোঁদা গন্ধ নিতে পারব না বুক ভরে… আমি তখন আর পারব না বর্ষায় নগ্ন কদমের দুলে যাওয়া দেখতে… পারব না বৃষ্টিতে মাঠে গিয়ে শুয়ে গিয়ে প্রকৃতির সাথে মিশে যাবার ব্যর্থ চেষ্টা করতে…
চিৎকার করে উঠতে ইচ্ছে করে… নাআআআ...। তখন আমি কী করে থাকব...!
নাহ, এইতো বেশ আছি! কষ্টের মাঝে আবদ্ধ হয়ে, স্মৃতি গুলো নিয়ে...।।  কত না সুখী এই আমি! কত না সংগী এই আমারই– এই আকাশ, এই বাতাস, এই বৃষ্টি, এই স্নিগ্ধতা…সঙ্গী যে শুধু মানুষ হবে তাতো নয়...।।
হঠাৎ মুখে গানের ওই চরণগুলো জায়গা করে নেয়–
যদি এমনি করেই যায় চলে দিন,
যাক না ……


আমরা যখন অনেক ছোট ছিলাম তখন আমাদের বন্ধুত্ব হতো সবার সাথেই কোন কারণ ছাড়াই। সে বন্ধুত্বে থাকতো না কোন ভালো-মন্দ বাছ বিচার, মন যে ভাবে চাইতো সে ভাবেই বন্ধুত্ব হয়ে যেত। এটাই হল প্রকৃত বন্ধুত্ব। এ বন্ধুত্ব মিত্যুর আগ পযন্ত থাকে।
আস্তে আস্তে আমরা যখন বড় হতে শুরু করি, স্কুল জীবন শেষ করি তখন কলেজ জীবনে এসে আমার ভালো-মন্দ বিবেচনা করে বন্ধুত্ব করি। এ বন্ধুত্বে থাকে নিজের স্বার্থ আর স্বার্থ উদ্ধারের চিন্তা। যার কারণে এ বন্ধুত্ব অল্পতেই ভেঙ্গে যায়।
আমরা যতই বড় হতে থাকি আমাদের মাঝে ততই জটিলতা চলে এসে, ছোট বেলায় আমাদের মাঝে কোন জটিলতা ছিল না ......।।


এই পৃথিবীতে মন খারাপ করে থাকার ব্যাপারটা ভীষণ অদ্ভুত। হয়ত তুমি কোন এক রাতের আলোয় গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে ভুল কোন পথে চলে যাবে। তুমি বাড়ি ফিরতে দেরি করবে, আর তখন তোমার মন খারাপ করবে। হঠাৎ হয়ত পৃথিবীর রাজ্যের সব জলকণা এসে তোমার দু’চোখে ভর করবে আর তুমি বুঝতে পারবে তুমি ভালো নেই। তোমার ঘরের হলদে বাতি, নীল দেয়াল কিংবা রঙিন পর্দাও তখন তোমার মনকে রাঙাতে পারবে না। প্রতিরাতে তুমি ঘুমাতে যাওয়ার সময় ভাববে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে কিংবা কোন একদিন আর তোমার মন খারাপ হবে না। ছোট্ট বিছানাটায় শুয়ে শুয়ে তুমি ভাববে তোমার অন্ধকার ঘরে হাজার হাজার জোনাকপোকা জ্বলছে। প্রথমে দেখবে একটা দুটো – তারপর দেখবে থোকায় থোকায়। তারপর দেখবে এক আকাশের তারার মত জ্বলজ্বল করছে জোনাকপোকা। তুমি ভাববে তোমার ঘরের মত জোনাকপোকাগুলো তোমার জীবনের আকাশেও রুপালী তারা হয়ে জ্বলবে, কিন্তু তারপরেই তুমি বুঝবে তুমি স্বপ্ন দেখছিলে আর ফের তোমার মন খারাপ হয়ে যাবে।
এই পৃথিবীতে মন খারাপ করে থাকার ব্যাপারটা ভীষণ অদ্ভুত। তুমি যখন দূর্বল থাকবে তখন মানুষ তোমাকে আগাছা ভেবে মাড়িয়ে চলে যাবে, আবার তুমি যখন নিজের শক্তিটুকু নিয়ে উঠে দাঁড়াতে চাইবে তখন তারা তোমাকে হিংসা করবে, তোমাকে মনে করিয়ে দেবে তুমি ক্ষুদ্র, তুমি তুচ্ছ, তোমার মত আগাছার কোন প্রয়োজন নেই, এমনকি কখনো ছিলও না। আবার তুমি যদি খুব অন্যরকম কেউ হও, খুব সাহসী কেউ, যে স্বপ্ন দেখতে ভালবাসে, যে অনেক রাতে হাসনাহেনা ফুলের ঘ্রাণ পেলে আনন্দে অভিভূত হয়ে যায়, যে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চায় তখন মানুষগুলো তোমাকে বোকা বলবে তোমাকে কল্পনাবিলাসী বলে উপেক্ষা করবে আর ভাববে তুমি খুব অহংকারী। এক সময় তোমার নিজেকে নিয়ে খুব ক্লান্ত লাগবে। আর তুমি বুঝবে তোমার মন খারাপ হয়ে গিয়েছে।
এই পৃথিবীতে মন খারাপ করে থাকার ব্যাপারটা আসলেই ভীষণ অদ্ভুত…



ভার্চুয়াল জগতটাতে এসে একটা সময়ে নিজেকে অনেক একা এবং খালি মনে হতে থাকে। অনেকের একইরকম অভিযোগ আছে, যা সত্য। আমিও কতবার যে নিজেকে সবকিছুর ভিড়ে একদম একা দেখেছি, শূন্য দেখেছি!

মানুষে মানুষে এখন আর চোখাচোখি হয় না। চোখাচোখি হয় একটি মেশিনের সাথে, দীর্ঘক্ষণ, দীর্ঘবেলা। চোখের মণিতে ভেসে থাকে রোবটের প্রতিচ্ছবি। চোখের পাতায় এর কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না। সম্পর্ক গড়েও দ্রুত, ভাঙেও দ্রুত। সেখানে তো মান-অ
ভিমানের বিনিময় নেই, সাক্ষাৎ নেই, উপস্থিতি নেই। এমন কতো কতো না থাকা আছে। ‘থাকা’কে আর কে জায়গা দেয়? কতোদিন আছে, যখন শোনা হয়না আপন কোনো বন্ধুর মুখে নিজের নামটা। এখন ট্যাগিংই তো ভরসা, প্রান্ত থেকে প্রান্তের বন্ধুকে ডাকাডাকি করার জন্য। যাকে সারাক্ষণ অনুভবেই রাখছি, তাকে নিয়ে শূন্যস্থানে চোখজুড়ানো-মনজুড়ানো কথা লিখে চলছি পেট খালি করে। অথচ, তাঁর কাছে বলতে গেলে বলার মতো সহজাত শব্দগুলোই মুখে জোটাতে পারছি না! মানুষ পড়ছে ভালোবাসার সংজ্ঞা। অথচ যাকে ভালোবেসে ভালোবাসার সংজ্ঞা লিখছি, কেবল সে-ই জানছে না হাত ধরে রাখার অনুভূতি কী, মায়া কী। অনেক কিছুই আছে, যা নেই। বদৌলতে আছে, শর্টকাট। কমেন্টবক্স-চ্যাটবক্সে অপমান করার স্পর্ধা আছে। অবাধ স্বাধীনতা আছে। যেখানে কিনা কারো সামনে দাড়িয়েও ক্ষোভকে আমরা সহজ ব্যাকরণে ঝেড়ে দিতাম! অ্যালবামে আমরা কী বেঁধে রাখতাম, কীভাবে বেঁধে রাখতাম প্রিয়জনকে-প্রিয়স্মৃতিকে? এখন কোথায় রাখি আর? আমাদের মাঝে একটা শান্তবেলা ছিল। ছন্দ নিয়ে আমাদের মাঝে ঘুমেরা আসতো। এখন চোখ বুজলেও ঘুম আসে না। রাত নামলেও অন্ধকার হয়না পৃথিবী। রোবোটিক স্ক্রীন-প্যাড-পডের ক্ষুদ্র জ্যোতিকে সাঙ্গ করে চোখের জ্যোতিকে নমঃনমঃ করছি। সূর্যকে নিয়ে আমাদের আনন্দ করার দিনগুলো তারপর ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে থাকে। অ্যাডভারটাইজড ফ্রোজেনফুড-ফাস্টফুডের তড়িৎভোজন আমাদেরকে দিয়েছে অন্নপূর্ণার হাতের উষ্ণ ভালোবাসা থেকে মুক্তি। নাড়ির বন্ধন থেকে নিজেকে ত্যাগ দিয়েছি, আর আগলে ধরেছি ওয়্যারলেস কানেকশন। আমরা গতিবেগ পেয়েছি ঠিক, কিন্তু বিনিময়ে নিজেদেরকে ক্ষুদ্র করেছি। করে চলছি।

স্ট্যাটাস আমাদের মনন জগতকে উলঙ্গ করে দিয়েছে একপ্রকার। চাইলেই তো এখন সহজে সবকিছু উগলে দিতে পারি আমরা। কোন কথাটা নিজের জন্য আর কোন কথাটা সার্বজনীন- সেটা আমাদের বিবেচনায় এখন ছাঁকা হয় না তেমন। আপন মাঝে আপন জগত বলে স্বীকৃত কিছুকে বাঁচিয়ে রাখছি কি আমরা?

হ্যাঁ, সময়ের সাথে নতুনত্বের প্রয়োজন আছে। কিন্তু এখন অনেক কিছুকেই প্রয়োজনের ঊর্ধ্বে বলে মনে হয়। প্রয়োজনকে ঘিরে মানুষের ধৃত আচরণকে নিয়ে আমার মাঝে প্রশ্ন তৈরি হয়। মানুষ আদৌ কি প্রয়োজনের মাঝেই সীমিত রেখেছে উন্নয়নকে, নাকি সেটা কৌতূহলের নাগালকেও ছাড়িয়ে গেছে?
তারপরও, নিজের মত করে স্রোতের বিপরীতে হাঁটার চেষ্টা করছি। স্বপ্ন দেখছি। নিজের শরীরও যেন নিজের বিরোধিতা করে। বলে, ‘আর কতক্ষণ?’
বন্ধুর পাশে বসে, প্রিয় মানুষ গুলোর পাশে বসে কথা বলা, তাদের সাথে আড্ডা দেওয়া, ভাললাগা- খারাপলাগা কথোপকথন  আর ভার্চুয়াল জগতে তাদের সাথে কথা বলা কি এক...???? কখনই না...।। 
আমার খুব ফিরে যেতে ইচ্ছে হয়, একটা সুন্দর দিনে। এই ভার্চুয়াল জগতে আর ভালোলাগে না... 

জীবনের রুপরেখা নিঝুম ত্রিযিমার গহীন অন্তরীক্ষে
নক্ষত্রের মেলা দেখিনি সত্য,
তবে, আলোকদীপ্ত তারকার হাসির অন্তরালে
আমি কষ্টের প্রস্রবন দেখেছি। আবার, উন্মত্ত উল্কা পিন্ডের আঘাতে
পাহাড় ধ্বংস হতে দেখিনি সত্য,
কিন্তু, জীবন সমুদ্রের নাবিক হয়ে
বহু জীবনকে ব্যর্থ হতে দেখেছি।


নিরর্থক সময় কাটানো, নিরর্থক শব্দ লেখা এই জীবনে আমার নতুন কিছু না। এমনটা হয় অনেক, হতেই থাকে… হচ্ছে অনেক দিন, হয়ত হবেও… আমার হয়ত নিয়তিই এমন। এই কথাটা লোকে যেভাবে বুঝবে, আমি তেমন করে লিখিনি। নিয়তি শব্দটা আমি বিশেষার্থে ব্যবহার করি। সেইটা সবার বোঝার দরকার নাই।

ব্যাখ্যাহীন, এক অনন্যসাধারণ যন্ত্রণা। আমি দেখতে দেখতে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। এই টেবিল, এই বইগুলো, এই জীবনের চিন্তা আর চাওয়াগুলো আমি সাজিয়ে রেখেছি অনেককাল ধরে। না পারি ভেঙ্গে ফেলতে, না পারি নতুন কিছু করতে। কারণ, নতুন কিছু সাজিয়ে রাখার স্থান নেই এখানে। আর, ভেঙ্গে ফেলতেও পারিনা। আমি তো ধ্বংস করতে শিখিনি। আমি তো গড়বো বলেই আজীবন দৃপ্ত প্রত্যয় করেছিলাম নিজের সাথে।

কল্পনার বিদঘুটে তেতো স্বাদের অনির্বচনীয় পংক্তিগুলো সরিয়ে আর কোন জায়াগাও পাচ্ছিনা যেখানে নতুন কিছু স্থান দিবো। অথচ, আমার সময় অফুরন্ত। কিছু করতেও পারছি না। আসলে ইচ্ছাও নেই। আমি এই শব্দহীন দৃশ্যপটের মাঝে খুঁজে চলেছি কী… আমি জানিনা।
মহাকাব্য...। সে আবার কী? আমার না-লেখা পংক্তিগুলো তো শত শত মহাকাব্যকে হার মানাবে, তাইনা...!!? আমার শব্দেরা বড়ই কৃপণ।  আমিও, না পেতে পেতে কৃপণতাই আমার পন্থা হয়ে গেছে। শব্দই বা কোথায়। সেই পুরোনো জীবনের নতুন পুনরাবৃত্তি। ঘিনঘিনে, কুতসিত, কদাকার, বিদঘুটে সব অনুভূতি আমার। ভালো অনুভূতি গুলোও আছে অনেক কিন্তু সে গুলো ক্ষণিকের তরে আমার কাছে এসে চিরতরে হারিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে বললে ভুল হবে, চলে গেছে।  আমি আমার মাঝেই বারবার প্রতিভাত হই।
আমি কি চেয়েছিলাম, তা ভুলে গেছি। চাওয়াকেও আমি বদলে দিয়েছিলাম। তার আদেশ মানতে। আমি তো আর পারিনি। আমি তো আর পারিনি কোন সত্যিকার পালাবদলের সম্ভাবনা আনতে। এই অন্ধকারের মাঝে আর কত রোমন্থন। এইসব বাক্যের কোন মানে নেই।

 কোথা থেকে আমার মাঝে আসবে আমার কাব্য প্রেরণা? আমি কেন এই শূণ্যতা, এই ফাঁপা আত্মা নিয়ে ঠকঠক ঠকঠক করে বেজে যাই, কেন ...???

জীবনটা আরেকটু সুন্দর হতে পারতো। আমারও হতে পারতো সুখময়, সাচ্ছন্দময় জীবন কিন্তু তা হয় নি। আমি আর শূণ্য দৃষ্টিতে কিছু দেখিনা। দেখলেও এই বিশালতা এমনই থাকবে, তা আর আমার মাঝে আসে না। আমি দিনদিন এমন জড় পদার্থ হয়ে যাচ্ছি কেন...? কেন এই নিঃসঙ্গতা ...??  অন্ধকার আর আলোর মাঝে যে কেবল দৃষ্টি শক্তিটুকুই আলাদা করে। আর কিছু না… একদম কিচ্ছু না। কোন প্রাণ তো নয়…



MARI themes

Powered by Blogger.