বন্ধুত্বের অভীমান

আমাদের সব সম্পর্কের মধ্যে সবচেয়ে স্বাধীন ও নির্ভার সম্পর্কটি বোধ হয় বন্ধুত্বের। শুধু মনের খোরাক মেটানোর জন্য অনন্য এই সম্পর্কের তুলনা বোধ করি অন্য কোনো সম্পর্কের সঙ্গে হয় না। পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে তৈরি হওয়া এই সম্পর্কের কাছে আমরা আমাদের ভালো লাগা, মন্দ লাগা, ভাবনা, মতাদর্শ নিঃসংকোচ ও নির্দ্বিধায় প্রকাশ করতে পারি। জীবনের পথ চলায় যখন আমরা ক্লান্ত হই, তখন বন্ধুত্বের খোলা হাওয়াই পারে আমাদের উজ্জীবিত করতে। বন্ধুদের মধ্যেই আমরা নতুন করে নিজেদের খুঁজে পাই, বেড়ে উঠি প্রতিনিয়ত।

তবে এ সম্পর্কেও ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থাকে। মতের অমিল, না বুঝে কোনো স্পর্শকাতর বিষয়ে আঘাত দেওয়া, ছোটখাটো প্রত্যাশা পূরণ না হওয়া, তুচ্ছ বিষয় থেকে মনো মালিন্য ইত্যাদি কারণেই গভীর আস্থার এ সম্পর্কে ছন্দ পতন হতে পারে।


সম্পর্কটি খুব প্রিয় বলেই হয়তো এ ছন্দপতনে যৌক্তিক সমাধানের চেয়ে আবেগের প্রাবল্য ও আত্মাভিমানই অনেক সময় তীব্র হয়ে ওঠে। এ কারণে সহজ বিষয়গুলো হয়ে যায় জটিল। পরস্পরের যে চমৎকার বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে এই সম্পর্ক একসময়ে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছিল, সেগুলো আর আমাদের মনে থাকে না; বরং সম্পর্কের ছোটখাটো সমস্যাগুলোই প্রধান হয়ে ওঠে। অভিমানের কারণে নিজেকে বন্ধুর কাছে লাগে অগুরুত্বপূর্ণ। ফলে, অনিবার্যভাবেই তৈরি হয় দূরত্ব। আর সম্পর্কটি খুব স্বাধীন বলেই সাময়িক দূরত্ব থেকে দীর্ঘস্থায়ী দূরত্বের ঝুঁকি থেকে যায়। নিজের অজান্তেই হারিয়ে ফেলি যেকোনো সংকট-আনন্দে শর্তহীনভাবে পাশে থাকা বন্ধুটিকে।