জীবনে সপ্নের শেষ নেই, সপ্ন সপ্নের মতো দেখতেই থাকে। থামতে বললেও থামে না। আমি একটি কবিতার স্বপ্ন দেখেছিলাম। যে কবিতায় থাকবেনা কোন কষ্ট গাঁথা, রইবেনা কোন স্বজন হারানোর অব্যক্ত ব্যাথা, যার পরতে পরতে রইবেনা কোন কান্নার সুর। যে সুরের টানে জীবনে আসে দুখের সমুদ্রর।
আমি এমন একটি কবিতার স্বপ্ন দেখেছিলাম-যে কবিতায় থাকবে শুধু জীবনেরই জয়গান, পরতে পরতে রইবে শুধু স্বপ্নীল আহবান, যে স্বপ্নের মায়া জালে পড়ে উড়ে যায় সব জরা, রংধনুরই বর্ণিলতায় মুছে যায় যত ক্ষরা। স্বপ্নের সে কবিতা আজও আমার লেখা হয়ে ওঠেনি। ঝড়ের তোড়ে উড়ে যাওয়া সময়ে পাইনি সুখের দেখা। কষ্টের যত রঙ আছে তা কবিতায় আসে ফিরে কভু পাইনি দেখা সেই কবিতার, যা ভাসাবে আমায় সুখের সাগরে।।

কখনও কখনও নিজেকে আকাশের মত মনে হয়। হৃদয়টাকে মনে হয় আকাশের মত বিশাল। বিশাল ঐ হৃদয় নিয়ে জাগতের না পাওয়ার বেদনা মাড়িয়ে ভাবি শুধু পারতাম যদি করতে জয়, জাগতের সব না পাওয়ার বেদনা। কখনও কখনও নিজেকে সাগরের মত বড় মনে হয়। সাগরের বিশালতার মত নিজেকে বিশাল ভাবি। যত ঝড়-ঝঞ্চা আসুক, সাগরের ঢেউ এর মত সব কিছুকে ভাসিয়ে দিতে পারব বলে বিশ্বাস করি। আচমকা এক দমকা হাওয়া এসে আমার সেই বিশ্বাসের ভিত গুলো নাড়িয়ে দেয়। কল্পনার রাজ্যে বসে আকাশ আর সাগরের মত ভাবনা গুলো নিমেষেই বাস্তবতার আঘাতে জর্জরিত হয়ে যায়। জীবনের কঠিন বাস্তবতা তখনই আঘাত করে রেখে যায়। মনের মাঝে সত্যের কঠিন পরশ বুঝতে পারি সাগর ও আকাশের মত বিশাল আমি নই।
যা কিছু ভাবি, সবই আমার কল্পনা। কল্পনার রাজ্যে বসবাস, কল্পনাময়ী আমি...।।

বড্ড  উথাল-পাথাল করছে মনটা। কেন জানি অন্তর চক্ষু দিয়া আর কিছুই দেখতে পারছি না। এমন হলে কেমনে হবে...??? মন টাকে যে আটকিয়ে রাখতে হবে। ভাল্লাগেনা ব্যাধি তে পেয়ে বসলে  আমি তো ধ্বংস হয়ে যাবো ।

-কি চাচ্ছে আমার মন?

মন চাচ্ছে হারিয়ে যেতে, বহু দূরে । ঐ যে সমুদ্র, সমুদ্রের দেশে সেখানে যেতে চাই।  পাহাড়ের সাথে আত্মার হাহাকারের মিল খুজতে মন চাচ্ছে । সমুদ্রের স্রোতের সাথে ভেসে যাইতে মন চাচ্ছে আর যখন ঐ দেশে মেঘটি বৃষ্টি নামাবে আমিও কাঁদবো। অনেক কাঁদবো, চিল্লিয়ে কাঁদবো। এমনি লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদতে পারবোনা সেখানে । চিল্লিয়ে কাঁদবো । যে ভাবে পাথরের উপর স্রোত আঁছড়ে পড়ে পাথরো ভিজে যায়,আমিও ভিজে যাবো। আর ঐ যে সূর্য , সে যখন অস্ত যাবেে, সেখানে নাকি রূপকথা নেমে আসে। কতোদিন ধরে রূপকথা শুনি না ...???   ভাঙ্গা নায়ের ভাঙ্গা তরী লইয়া আমি যাবো সেখানে। আমি বড় ক্লান্ত, ভাল্লাগেনা ব্যাধি ধরা আমি আর মিছে মানুষদের দুর্বিনীত চেহারার মাঝে থাকতে পারছি না । আমার মুক্তি চাই পৃথিবীর বুক থেকে...।।

ভেবেছিলাম একটা গল্প লিখব জীবনের নানান চড়াই উতরাই নিয়ে। নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা পার হয়ে আজ জীবনের যে মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছি সে সব নিয়ে একটা গল্প লিখব। লেখাটা শুরুও করেছিলাম একসময়। কিছু দূর লেখার পর বুঝতে পারলাম কেমন যেন খেই হারিয়ে ফেলেছি, লেখাটা আর এগুচ্ছে না, মনের অব্যক্ত অনুভূতি গুলো কেমন যেন দুমড়ে- মুচড়ে, চুপসে গেছে। বারে বারে শুধু মনে হচ্ছে কি হবে গল্পটা লিখে...??? কে পড়বে আমার এ ছাঁইপাশ জীবনের গল্প, শিশুতোষ গল্প...??? মুল্যহীন মানুষের গল্প...??
জীবন পথের নানান মোড়ের, নানান বাঁকের ঘটে যাওয়া টুকরো টুকরো ঘটনা গুলো লিখতে চেয়েছিলাম গল্পের মত করে, একদিন এক খেই হারানো সুরের মত লেখার গতিটাও হঠাৎ কেমন যেন থেমে গেল, অসমাপ্ত গল্পটা তাই আর শেষ করা হলো না।।

মাঝে মাঝে আকাশটাকে খুব কাছে মনে হয়। মনে হয় হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায় নীল আকাশের এই সীমানা টাকে। যখন খুশী ইচ্ছে মত হারিয়ে যাওয়া যায় সাথে নিয়ে রঙ বেরঙের স্বপ্ন গুলোকে। মাঝে মাঝে আকাশ টাকে খুব কাছে টেনে নিতে ইচ্ছে হয়। হৃদয়ের সব জমাট বাঁধা স্বপ্ন গুলোকে আকাশের সাথে মিশিয়ে দিয়ে  হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হয় আকাশেরই ঐ নীল অজানার পানে। আচমকা এক ঝড়ো হাওয়া এসে আমায় উপলব্ধি করতে বাধ্য করে আকাশের বসবাস অস্পৃশ্যতার এক আবাহনে।
আর মানুষের ঠিকানা...??? সে তো শুধু এই মর্ত্যেই। আমিও তো মানুষ তাই না...???

হঠাৎ কোনো এক ভোরে, ঘুমহীন রাতের পর দাড়িয়ে দেখছি ঐ সূর্যোদয়।
বেশ বিষণ্ণ মন আমার, গতকাল ডাক্তার আমার মেডিকেল রিপোর্ট দিয়েছে।
আমার নাকি ব্রেইন টিউমার ধরা পড়েছে। এইতো আর কিছু দিন হাতে রয়েছে...।।
পৃথিবী টাকে এতো মায়া ভরা চোখে এর আগে কখনো দেখিনি আমি। আজ কেন জানি অনেক মায়া লাগছে।
কষ্ট হচ্ছে বাবা-মা কে ছেড়ে যেতে হবে বলে। তবে একটু সস্থিও লাগছে...।।
আমিতো তাদের একমাত্র ছেলে !! সইতে পারবে কি তারা এ কষ্ট..??
পারবেনা জানি... তাতে কি..??? অনেক কষ্টই তো দিয়েছি, শেষ বেলায় না হয় বড় বেশী কষ্ট দিয়ে গেলাম।
আমি চলে যাচ্ছি বলে আমার বিন্দু মাত্র কষ্ট হচ্ছেনা এই ভেবে যে আমি মৃত্যুময়ী একজন যাত্রী...
কিন্তু এ মানুষ গুলো কে যে আমি নিজের চেয়েও বেশী ভালবাসি...সত্যি বলতে তাদের ভালবাসা উপেক্ষা করার মত ক্ষমতা আমার মাঝে নেই। আমার আছে বলতে কিছুই নেই, এই বাবা - মা ছাড়া। এই দুই জন মানুষ-ই আমার সব।
আমার বাবা-মা কখনই আমাকে তাদের অতিরিক্ত ভালবাসা উপল্পধি করতে দেয়নি কিন্তু যাবার কালে কেন এই পিছুটান...??? কেনো এতো ভালবাসা...??? আমি তো সব সময়ই চাইতাম তারা তাদের ভালবাসা প্রকাশ করুক কিন্তু...।।
আজ আমি দেখছি আমাকে সবাই কতটা ভালোবাসে,কতোটা কাছে টানছে...।। কৈ সময় থাকতে তো কেউ এভাবে কাছে ডাকে নি, কাছে রাখে নি...।। তবে শেষ বেলায় কেন...??
অবাকময়ী হয়ে তাদের এ টান আমি আমার চোখের জলে আরাল করতে চাইলেও পারছি না।
আচ্ছা,আমি না কাঁদতে পারতাম না...!!
তবে আজ এতো কেন কান্না পাচ্ছে আমার...???

এই ভোরের আলো, এই সূর্যোদয় আমি হয়তো আর দেখতে পারবোনা... তবে কি এই আমার শেষ...???
জানি এই ভোরের মায়া আমাকে আর খুঁজে পাবেনা তবে আমায় অনেক মিস করবে...।
কারন আমিতো নিশাচর রাতের শেষে ঘুমন্ত ভোরের সঙ্গী হয়ে ওদের সঙ্গতা দিতাম,
নীরবে বসে পাখি দের গান শুনতাম, চাঁদের সাথে কথা বলতাম। সব চেয়ে বেশি এরাই আমাকে মিস করবে আমাকে না পেয়ে।
আর পারবো না, তাই ওদের কে খুব "SORRY" বলতে ইচ্ছে করছে।
থাক, ওড়া অন্তত না জানুক আমি যে ওদের ছেড়ে চিরদিনের মতো বিদায় নিচ্ছি...

বন্ধুদের নিয়ে কিছুই বলার নেই কারন আমি জানি, ওদের জন্য সর্বদাই আমি সাময়িক । তাই মৃত্যুর পর সাময়িক ভাবে কয়েক দিন মনে রাখবে তার পর ভুলে যাবে।
কখনো কারো ভালোলাগা হতে পারি নি, কারো মনে এতো টুকু জায়গা করে নিতে পারিনি। তাই আমাকে মনে রাখার মতোও কিছু নেই।

"মাঝে মাঝে হয়তো মনে পড়বে আমায়,
কারো কোনো চোখের জলে,
শিক্তো হৃদয়ে দেখা দিবো আমি জলন্তো প্রতিচ্ছবি হয়ে,
তাই যাচ্ছি চলে বিদায় দাও মোরে...।।"


<বিঃদ্রঃ মৃত্যুময়ী কল্পনা আমার। শুধুই কল্পনা নয়...>


অনেক দিন পর এতোটা ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। আদৌ ঘুমিয়েছিলাম কিনা জানি না। এখন কেমন যেন ভোরে উঠতে ইচ্ছে হয় না, ঘুম না আসলেও শুয়ে থাকি। কেমন যেন একটা অনুভুতী।
ভোর সবার-ই আসে, একেক জনের ভোর একেক রকম। কারো নতুন কিছু শুরু করার প্রত্যয়ে, কারো আরেকটি হতাশা ভরা দিনের শুরু। আমার দ্বিতীয় টি, মানে হতাশা ভরা আরেকটি দিন, আরেকটি ভোর। মাঝে মাঝে এই ভোরটা কে থামিয়ে দিতে ইচ্ছ করে, ইচ্ছা করে এই হতাশা কাটিয়ে একটু সস্থির নিঃশ্বাস ফেলতে। আমারো যে ইচ্ছা আছে, আমারো যে নতুন কিছু পাওয়ার স্বাদ জাগে।
একটি ভোর চাই আমি একটি ভোর। যে ভোরে চোখ খুলতেই ভয় নেই, আতংকের কোন হাহাকার নেই। একটি ভোর চাই আমি একটি সূর্য চাই চারিদিক আলোকিত মুগ্ধ সকাল চাই। স্বপ্ন পূরোন এর অঙ্গিকার চাই। আর অন্ধকারে আলোর আশা নয়, এই বার সত্যি একটি সোনালী সকাল চাই…।।


জীবন কি...??? জীবন মানেই সুখের স্মৃতি বয়ে বেড়ানো। বেঁচে থাকা মানেই দুঃখের সাথে সহবাস করা। অবিমিশ্র সুখ মানুষের ভাগ্যে কখনই লেখা হয় না। সুখ বাঁচিয়ে রাখতে সবচেয়ে বেশি অস্বস্তি অনুভব করে মানুষ। যে কোনো ছলছুতোয় সে দুঃখকে ডেকে নিয়ে আসে। সুখের চেয়ে দুঃখের সাথে বাস করতে মানুষ বড় আরাম বোধ করে। কারন অতিসুখে হাহাকার থাকে না। সন্দেহ, জ্বালা অথবা নিজেকে বঞ্চিত ভাবার যন্ত্রনা পাওয়া যায় না। কোনো এক মুহূর্ত অথবা কিছুদিনের বুকে খুশির সূচিকর্ম সারাজীবন টাঙিয়ে রাখার নাম জীবন।

আমরা বেঁচে থাকি বেঁচে থাকার প্রাপ্তিতে, বেঁচে থাকার অনুভুতীতে, বিশ্বাসে, সপ্ন দেখার মাঝে, বেঁচে থাকার প্রতিশ্রুতিতে। একটি প্রতিশ্রুতি, কিছু ভালোলাগার মুহুর্ত সাথে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আর উচ্ছল বর্তমান। একটি স্বপ্ন, কিছু সুখের অনুভূতির সাথে রঙীন দিনের বর্ণিলতার প্রতিশ্রুতি আর স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকার অব্যক্ত কিছু আকুতি। একটি ঝড়, কিছু এলোমেলো দিন সাথে দুঃসহ কিছু যন্ত্রণা আর স্বপ্ন ভাঙ্গার বেদনা। ঝড় সামলে উঠে আবার ঘর গোছানোর চেষ্টা নিত্য নতুন ঝড়ে আবার পিছিয়ে পড়া। একটা ঝড় সামলে উঠার আগেই আরেকটা ঝড় এর মুখে পড়া। ঝড় সামলে অগোছালো নিজেকে গোছাতে গোছাতেই আবার আগোছালো হয়ে যাওয়া। এখন গোছানোর একটা ব্যর্থ চেষ্টা মাত্র। এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে অনিশ্চিত পথে জীবনের যাত্রা।।

আচ্ছা আমাদের অনুভুতী গুলো এমন কেন...??? আমাদের বলবো নাকি আমার বলবো বুঝতেছি না। আমার-ই বলি কারণ অনুভুতী গুলো শুধুই আমার। মাঝে মাঝে খুব যন্ত্র মানব হতে ইচ্ছে করে কাজের মধ্যে ডুবে থেকে।  মানবীয় অনুভূতি গুলো থেকে মুক্তি পেতে ইচ্ছে করে। শুধু ভেবে যাই কাজের মাঝে ব্যস্ত হয়ে হয়তোবা জীবনের সকল দুঃখ ভুলে থাকা যায়। আমি তাই এখন প্রচন্ড ব্যস্ততা চাই ব্যস্ততার মাঝে ডুবে থেকে নিজেকে একটা যন্ত্র মানব রূপে দেখতে চাই মানবিক সব অনুভূতিকে পেছনে ফেলে সমস্ত আবেগকে কবর দিয়ে শুধু ব্যস্ত সময়ের পেছনেই ছুটতে চাই।।

আমার আমি সে এক অচেনা গল্প। কোথায় চলছি আজ কোন পথে জানিনা। কত ব্যস্ততা শত কিছু, কত রং বদলানো ক্ষণ। কত মানুষের ভীড়, কত মুখ কত চেনা, কত আপন। কত প্রান্তরে ছুটে চলি কত পথ পেরিয়ে যাই, কত সাগর পেরিয়ে ভাসি স্রোতে। আশা নিরাশার কত গল্প শুনি। চোখ ধাঁধাঁনো কত স্বপ্ন, কত ভ্রম মধূময় পূর্ণিমা, কত চেনা স্মৃতি। কত নীল কত আধাঁর কত শত ভুল। দিক দিগন্ত কত ছুটা কত মানুষের ভীড়, কত মুখ খুজেঁ ফিরি তবুও দেখিনা কোন পথে কোথায় আছ আমি, জানিনা...।।

আজ স্বপ্ন গুলোকে জড়ো করে তুলে দেবো সেই ভেলায় যে ভেলাটি যাবে ভেসে গোধুলী বেলার সমুদ্রের মোহনায়।
কাল থেকে আমার চোখে আর ভাসবে না কোনো স্বপ্ন। স্বপ্ন ভাঙ্গার যন্ত্রণায় আর কাটবেনা কোনো লগ্ন। সদ্য ফোঁটা ফুলের মত হোক শুরু এক নতুন প্রহর সেই আশারই ভেলায় করে দেবো পাড়ি সমুদ্রের সুনীল প্রান্তর।। ফিরবো না আর সে প্রান্ত থেকে।

যদি হাতের রগটি কেটে রক্তের বন্যা বয়ে দেই এবং অকাল কোনো ঘুমে চলে যাই এ মুহূর্তে কেও কি জানবে..???
খোঁজ নিবে কেও?
পাশের রুমে থাকা আব্বু-আম্মুরো জানতেও তো সময় লাগবে, সেই সকাল গড়াবে।  তাইনা.??? ঠিক এ মুহূর্তে মরে গেলে..???
হয়তো এ ভোর টাই হতো আমার শেষ দেখা কোনো ভেজা ভোর।
কিসের জীবন কাটাই আমরা..??? প্রতিটি রাত এক গভীর আবেগ নিয়ে একাকিত্তের কিছু হা-হুতাস। কেও কি প্রতিটিক্ষন আমার জন্য জেগে থাকে..??? চিন্তায় থাকে..??? এই যে রাত জাগা, আবেগে নীরব কিছু কান্না,কই কেও তো এর কোনো খবরও নেয় না। কি হবে, যদি মরে যাই..???  মা-বাবা এই দুটি শব্দ ছাড়া মাঝে মাঝে বেঁচে থাকার মতো কিছু খুজে পাই না। এই দুটি মানুষের জন্যই হয়তো আজও বেচে আছি, পৃথিবীতে আছি। ইশ যদি পারতাম, হাতের কোনার রগ টা কেটে দিয়ে নির্ঘুম কোনো ঘুমে চলে যেতে নিভৃতে-যতনে-গভীরে। খুব গভীর এক ঘুম... যা কোনো দিনই ভাঙার নয়।

একাকিত্ব আমার ভীষন ভালো লাগে। আমি ও আমার নিজের জন্য গড়ে তোলা একাকিত্ব জগৎ টি ছিলো আমার সংগী। আমার সর্বক্ষণের সাথী। সব সময় একাকিত্ত বা এমন কিছুকে সংগী করে নেই। সব সময় অনেক অনেক আপন করে ছিলাম আমার না পাওয়ার বেদনা, একাকিত্ব বা যে কোনো অপ্রাপ্তিকে।

কিন্তু আজ কেন জানি খুব একা একা লাগছিল সারাটা দিন। গত রাতে মনে করে ছিলাম আজ খুব ভাল ভাবে দিনটি কাজের মধ্যে দিয়ে চলে যাবে। সকাল থেকে সন্ধ্যে রুটিন বাঁধা জীবন। নিত্য নতুন কর্মকান্ডে নিজেকে নিয়োজিত করে রাখতে জানি। এ শুধু নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্যই। কিন্তু অনেক সময়ই তা পেরে উঠি না।

অনেকদিন পরে আজকে একাকিত্ব এসেছিল। প্রতি দিন-ই আসে কিন্তু আজকের একাকিত্ব অন্য রকম। বেদনা, একাকিত্ত বা যে কোনো অপ্রাপ্তির ঘটনা, অনেক অভিগ্গতার সে সব কারো সাথে শেয়ার করতে গিয়েও কেন যেন আর বলা হয় না এখন, আসলে বলতে পারিনা। কার কাছে শেয়ার করবো, কে শুনবে আমার কথা। তাই নিজেকেই নিজের মাঝে গুটিয়ে ফেলি। কি জন্য বা এর কারণ কি আমি জানিনা। আজ সারাটা দিন এমন হয়েছে। মাঝে মাঝে এমন হয়, ভীষন এলোমেলো সব কিছুই ঠিকমত গোছানো হয়ে উঠে না। মাঝে মাঝে নিজেকে গোছাতে ইচ্ছা করে কিন্তু একা একা কিভাবে...?? তাই গোছানো হয়ে উঠে না।

আমি বড় একা, নিস্বঙ্গতার কালো আঁধারে আজ নিজেকে খুজে ফিরছে, সব কিছু আজ শূন্য মরুভূমির মত। মনে হচ্ছে জীবনের ভালোলাগার অংশ গুলো কমে আসছে আর রঙ্গিন সপ্ন গুলো আজ ধূসর। আজ নিজেও বুঝতে পারছি না, কেন এমনটি হচ্ছে...??? মনে একটি কথা প্রায়ই উঁকি দিচ্ছে, আমি  কি পাগল হয়ে যাচ্ছি...??? বিশ্বন্নতায় ছেয়ে আছে পুরো মন। আজকাল কারো সঙ্গেই আর কথা বলতে ভালো লাগে না। ভালো লাগে না হাসতেও, হাসতে অনেক আগেই ভুলে গেছি। মরে যাচ্ছে অনেক ইচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রিয় আত্মজনদের কাছেও ফোন করা হয় না। নিজেকে তুচ্ছ মনে হয়, আমি পালিয়েছি নিজের কাছ থেকেই। দিন গুলো সব এক রকম মনে হয় এখন। রাত শেষে সকালটা অন্য রকম হবে, অথবা অন্য কোন অনুভূতি নিয়ে শুরু হবে দিনটা – প্রত্যাশাই করি খালি। ভাবি কালকের ভোরটা অন্য রকম হবে কিন্তু হয় না সেরকম। একই বৃত্ত ঘুরে আসে বার বার। বৃত্তটা ভাঙতে পারিনা।


সব ভালবাসা আর কান্নাময় চোখ গুলো ভিজিয়ে ব্রেইন টিউমার আমাকে আর  এই মায়া ভরা পৃথিবীতে বাঁচতে দিলো না..।

শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার অনুভূতি টা ছিলো অনেক আনন্দের সাথে অনেক বেশী কস্টের।
আনন্দের এ জন্যই যে আমি চলে যাচ্ছি, শেষ হয়ে যাচ্ছে আমার অস্তিত্ব।
আমাকে আর রাতের পড় রাত কষ্ট করে ঘুমহীন চোখে লোনাময় পানি ফেলতে হবে না।
আমাকে আর এই পৃথিবীর কঠিন বাস্তবতা  দেখতে হবেনা যেথায় মানুষ নামের  অমানুষ বেড়ে যাচ্ছে দিনেকদিন...যাদের কষ্টে আমিও অনেক আহত হয়েছি।
শেষ পর্যন্ত রক্ষা পেলাম নিজের থেকে।

আর কষ্ট হচ্ছে “বাবা-মা” এর জন্য।
একটি মাত্র সন্তান আমি তাদের, কি নিয়ে থাকবে তারা...???
তাদের অসহায় করে চলে যাচ্ছি।
মা টার হাওমাও করে কান্নার শব্দ শেষ নিঃশ্বাস ছাড়া পর্যন্ত কানে ভেসে আসছিলো,
আর চোখে বাবাকে দেখতে পেলাম এক মুহূর্ত । পাথরের মত বসে আছে এক কোনায় আর পাথর থেকে যেনো টিপ টিপ করে পানি পড়ছে...।

আমার আপু টা কে দেখতে পারছিনা। হয়তো ভাইয়ার চলে যাওয়া সে কোনো অন্তরাল থেকে দেখছে আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকছে কিন্তু সে শব্দ যে কানে আসছে না।

কোনো উত্তর দেয়ার মতো শক্তি বা ক্ষমতা কোনোটাই পাচ্ছিলাম না।

শেষ বারের মতো চোখটা একটু খুলতে চাইলাম কিন্তু হঠাৎ করেই আমার প্রিয় নানা ভাই এসে গেলো ।
আমাকে বলতে লাগলো “নানা ভাই...আর তো চোখ খুলতে পারবেনা। খুলেই বা কি হবে বলো ? তারচেয়ে  বরং আমার হাত টা ধরো এবং চলো”
আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমায়...???’
নানা ভাই বলল “সেটা গেলেই দেখতে পারবে, এই পৃথিবীতে তো আর তোমার যায়গা নেই নানা ভাই। এখন থেকে সেই আগের মতো আমার সঙ্গি তুমি।
তুমি আমার হাত টা ধরো”....।

মানুষের মৃত্যু মানুষকে অনেক দূরে নিয়ে যায় আমাকেও অনেক অনেক অনেক দূরে নিয়ে এসেছে তবে স্বত্বার কোনো মৃত্যু নেই আমার স্বত্বায় এখনো আমি বিচরন করি। মায়ের চোখের জলে বাবার থমকে যাওয়া চোখের ঝলকানিতে তবুও আজ বিচরন করি আমি পৃথিবীর মাঝে না হয় অন্য কোথাও স্বত্বার মাঝে খুঁজে পাই আপন হারানোর বেদনা টা কে হাসি সময়ের গতি দেখে মানুষের ভালবাসার সীমাবদ্ধতা দেখে তবুও ভাবি ‘মৃত্যু মানুষকে দূরে নিয়ে যায় তবুও কোথাও না কোথাও বাচিয়ে রাখে’
এখানেই না হয় মৃত্যু হলো আমার...
শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার অনুভূতি টা ছিলো অনেক আনন্দের সাথে অনেক বেশী কস্টের।
সত্যি বলছি ‘অনেক আনন্দের সাথে অনেক বেশী কস্টের ।”
মৃত্যুর শোক ভোলা সব চেয়ে বেশি সহজ। হয়তো আমাকে ভুলে যাবে সবাই। হয়তো মনেই করবে না কেউ আমাকে। প্রিয় কিছু মুখ, চেনা কিছু মানুষ, খুব আপন কিছু মানুষ, খুব খুব কাছের বন্ধু। মনে করবেই বা কেন...??? কি দিতে পেরেছি, দেওয়ার মতো হয়তো কিছু ছিলও না। আমাকে মনে রাখার মতো , আমাকে মিস করার মতো তো কিছু করি নি...।। খুশি হবে আপদ থেকে বাচবে বলে।


<মৃত্যুটা কাল্পনিক কিন্তু পরের গুলো বাস্তব >

একা মানুষগুলো অনেকটা অন্ধকারের চার দেয়ালে বাস করা আঁধারে ডুবে থাকা মানুষগুলো মতো । রাতের বন্ধকুপে অপ্সরির চিৎকার যেমন কেও কখনো শুনতে পায়না তাদের চিৎকারও কখনো কারো কানে পৌঁছায় না।
অন্ধকারের চার দেয়ালে বাস করা একটি রুমের কোন এক ফোটা দিয়ে যদি একটি মানুষের চোখে একটু আলো গিয়ে পৌঁছায় তবে সে, সে আলোর পিছেই দৌড়ায় । ভালবাসা আর একাকীত্ব এক তৃষ্ণার্ত মানুষকে যদি কেও একটু ভালবাসার সোপান দেয় তবে সে একফোঁটা ভালবাসার জন্য সে পাগল কুকুরের মতই ছুটবে,এটাই স্বাভাবিক আর যে মানুষটি এ সোপান তাঁকে দিবে তাঁর জন্য এ মানুষ গুলো যে কি না করতে পারে তা বোধয় বোঝানোর প্রয়োজন পরবেনা। আজ খুব বেশী একা হয়ে পড়েছি...। এমনিতেই আমি মানসিকভাবে একা একটা মানুষ কিন্তু আজ বড় বেশী একা হয়ে পড়েছি। সবার সাথে বিছিন্ন হয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার চেষ্টা আমার সর্বদা। কারন আমি এতোটাই অভাগা যে কারো সাথে আমার যায়না।
হা হা হা !!
মানে কেও আমাকে বেশিক্ষন সহ্য করতে পারেনা . তাই একাই পথ বেছে নিতে হয় আমাকে ক্ষণে ক্ষণে ।এই একাকীত্ব আমার কখনই পিছু ছাড়বে না...।
মাঝে মাঝে নিজেকে বড় পাপি মনে হয় । কিন্তু কি পাপ করেছি তা খুঁজে পাই না ।
হয়তো একা জন্ম নেয়াটাই একটা বড় পাপ ছিলো... আল্লাহ্‌ হয়তো এভাবেই সৃষ্টি করেছিলো আমাকে ।
 ঐ যে বললাম বাস্তব কষ্ট বা বাস্তবতা আসলেই অনেক বেশী কঠিন এবং কষ্টের...।।

MARI themes

Powered by Blogger.