মনের অস্তিত্ব

কিছু অভিমান আছে যাদের মনের কথা মনে রয়ে যায়, বাহিরে প্রকাশ পায় না। শুধু থাকে মনের গভীরে দীর্ঘশ্বাস। পৃথিবীর সব কিছুকেই একটি নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা যায়, কিন্তু কষ্টকে, খারাপ লাগাকে কোন নির্দিষ্ট সঙ্গায় সংজ্ঞায়ীত করা যায় না। কারন, কষ্ট এমন এক জিনিস যা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি ভিন্ন হয়, সময় সময়ে ভিন্ন হয়।

একটি মানুষের মন আছে কি নেই, তাঁর ভাললাগা-খারাপলাগা আছে কি নেই সে যদি না বলে আপনি কিভাবে জানবেন...?? হুম, জানতে পারবেন একটি উপায়ে যদি আপনি তার চোখের দিকে একটু লক্ষ্য করেন। এই চোখের দিকে লক্ষ্য করাটা কিন্তু যেইসেই কাজ নয়। অনেক কঠিন কাজ, অনেক অধিকার-আপনত্ব থাকতে হবে তার প্রতি। তাকে এতোটা আপন ভাবার পড়েই কেবল আপনি তার চোখের দিকে তাকাতে পারবেন, তাকানোর ইচ্ছা জাগবে মনে। তাকে যদি আপনি আপন নাই ভাবেন, কাছের একজন নাই ভাবেন তাহলে কখনোই তার খারাপ লাগাটা আপনার মন ছুবে না, তার চোখের দিকে তাকিয়ে তার কষ্টটাও বোঝার ইচ্ছা হবে না। 

কিছু সময় আমি নির্বাক হয়ে যাই, স্তব্ধ হয়ে যাই। আজ কিছু ঘটনা আমি বলবো। কথা গুলো আমার খুবই ব্যক্তিগত, একান্তই নিজের। তবে কথা গুলো আজ খুব খারাপ লাগা থেকে বলচ্ছি।

কয়েক মাস আগে News-এ পড়েছিলাম আমার নিজ এলাকায় একটি অটো রিক্সা Accident-এ মা-ছেলে মারা গিয়েছে আর ছেলেটার বাবা হাসপাতালে। আমি তখনো জানতাম না এই তিন জন আমার পরিচিত, তাঁরা আমার ছোট বেলার Classmate-এর আপন ভাই। একদিন পর যখন জানতে পাড়লাম অন্য কারো মাধ্যমে তখন আমি সত্যি Shocked-হয়ে গিয়েছিলাম, বিশ্বাস-ই করতে পারছিলাম না যে এটা উনি হতে পারে। তখন আমি এতোটাই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম যে কোন কথা বলার শক্তি আমার ছিল না, কিছু বলার ভাষা ছিল না। আচ্ছা আপনাকে আমি প্রশ্ন করি- এই রকম News-শোনার পর আপনি কি করতেন বা কি বলতেন...?? হয়তো আপনারো কিছুই বলার থাকবে না বাকরুদ্ধ হয়ে যাওয়া ছাড়া, যেমনটা হয়েছিলাম আমি। কিন্তু সে আমাকে কিছু কথা শুনিয়েছিল...একজন মানুষ মারা গিয়েছে সে দিকে আমার কোন অনুভূতি নেই, আমার কিছুই বলার নেই, মন বলতে আমার কিছু নেই, নিষ্ঠুর - পাষণ্ড আরো কিছু কথা। কথা গুলোর জবাব আমি দেইনি। যদিও আমার Classmate-এর কাছ থেকে খোঁজ খবর নিয়েছিলাম যতদিন সে ঢাকা হসপিটালে ছিল, তার পড়েও অন্য কয়েক জনের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে জেনেছি। 

সব সময় আবেগ প্রকাশ করা যায় না, খারাপ লাগাটাও প্রকাশ করা যায় না। বিশেষ করে আমি প্রকাশ করতে পারি না। অনেক সময় কারো কষ্ট দেখলে আমি চুপচাপ থাকি যেন কিছুই হয়নি, অনেক সময় এড়িয়ে যাই। এড়িয়ে যাওয়া মানে এই নয় যে বিষয়টি আমার মনে দাগ কাটেনি। এড়িয়ে গেলেও বিষয়টা মন থেকে ঠিকই অনুভব করি, মনে রয়েই যায়। অনেক সময় এমন হয় যে কেউ আমাকে খুব কথা শুনাচ্ছে, আমাকে আঘাত করে কথা বলচ্ছে। আমার প্রচণ্ড রকমের কষ্ট হচ্ছে কিন্তু আমি পাশের মানুষটাকে বুঝতে দিচ্ছি না। তার সাথে হাসি মুখেই কথা বলে যাচ্ছি। সে হয়তো ভাবচ্ছে আমি তার কথায় কোন কষ্টই পাচ্ছি না, কোন খারাপ লাগার অনুভূতিই হচ্ছে না। কিন্তু ঐ সময়টা যদি সে আমার চোখের দিকে একটু লক্ষ্য করতো তাহলে হয়তো আমি ধরা খেয়ে যেতাম। নিজের খারাপ লাগাটা, কষ্টটা লুকিয়ে রাখার যে চেষ্টাটা করছিলাম তা আর সফল ভাবে করা হয়ে উঠতো না আমার। এমনো সময় হয়েছে যখন আমাকে চোখে পানির ঝাপটা দিতে হয়েছে কারণ, চোখের পানি আমি আটকাতে পারচ্ছিলাম না। কিন্তু সে বোঝেনি বা পাশের মানুষটি বোঝে নি। ভেবেছে হয়তো চোখে ময়লা লেগেছে বা অন্য কিছু।

কথায় আছে ছেলেদের নাকি চোখে পানি আসতে নেই, চোখে পানি আসলেও কাউকে দেখাতে নেই। ছেলেদের নাকি কঠোর হতে হয়।  আমার খারাপ লাগাটা কখনোই আমি কাউকে বুঝতে দিতে চাই না, বুঝতে দেইও না। ভালোলাগার অনুভূতি গুলো সবার সাথেই বীনা বাঁধায় Share-করতে পারি, Share-করি। কিন্তু খারাপ লাগার অনুভূতি কখনোই কাউকে বলার সাহস পাই না, কেনন যেন ভিতর থেকে বলার ইচ্ছা হয় না। যাকে বলবো সে যদি উপহাস করে, এমনো হতে পারে তার হাতে সময় নেই, হয়তো সে শুনতে ইচ্ছুক না। যে মানুষটার জন্য আমার মন খারাপ বা আমার ভিতরের সব ওলট-পালট হচ্ছে তার সামনে এমন ভাবে কথা বলি সে বুঝতেই পারে না যে কতোটা খারাপ আমার লেগেছে। কেন যেন কখনো নিজেকে প্রকাশ করতে ইচ্ছে হয় না, কেন যেন নিজেকে লুকিয়ে রাখতেই ভাললাগে। ভাললাগে নিজেকে নিজের মাঝে আবদ্ধ রাখতে, নিজের চার পাশে একটা খোলসের মতো আবরণ রাখতে। আচ্ছা আমি যদি তার সামনে প্রকাশ করতাম তাহলে কি হতো...?? কিচ্ছুই হতো না, সে হয়তো এটাকে নেকামো ভাবতো বা অন্য কিছু...।। সে যদি বুঝতোই আমার খারাপ লাগবে, কষ্ট হবে তাহলে সে ঐ কাজটি হয়তো করতোই না... জীবনটা এমনি...!! কষ্ট - খারাপ লাগার অনুভূতি, আবেগ কখনো বোঝানো যায় না...।। 

আবেগের কথা যখন এসেই গেলো তাহলে আর একটি ছোট্ট ঘটনা বলি---

আজ থেকে প্রায় ১৪-১৫ বছর আগে। আমি তখন ক্লাস ২-৩ তে পড়ি। খুব শখ ছিল কবুতর, মুরগী পোষার। খুব সখের বশে কয়েকটা বাচ্চা মুরগী - মোরগ কিনেছিলাম পোষার জন্য। পাখি গুলো আমার এতোটাই শীকারি হয়ে গিয়েছিল যে প্রতি দিন সন্ধ্যায় আমার হাতে উঠে খাবার খেতো। বিষয়টা আমার অনেক ভালোলাগতো। হঠাৎ একদিন একটি মুরগীর অসুখ হলো। আম্মু ঐ মুরগীটা জবাই করবে কিন্তু আমার সখের মুরগী বলে কথা...!!! জবাই করা চলবে না...।। বলে দিলাম বাঁচলে বাঁচবে, যদি মারা যায় তাহলে মারা যাবে তবু জবাই করা যাবে না। অবশেষে মুরগীটা বেঁচে গিয়েছিল। 
ঐ যে একটা মায়া কাজ করতো মুরগীর প্রতি সেটা আজো রয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত দেশি মুরগীর মাংস আমি খেতে পারি না, কষ্ট লাগে, মায়া লাগে। 

এই ঘটনাটি বলার অর্থ হলো আমি ততোটা পাষণ্ড নই। একটা মানুষের বাহিরের কঠোরতা দেখে তার ভিতরের অবস্থা বিচার কথা ঠিক নয়। কঠোরতা হলো শক্ত খোলেসের মতো, যেখানে নিজেকে লুকানো যায়। কেউ একজন হয়তো আমার সেই শক্ত খোলসটা ভেঙ্গে নরম মনটা খুঁজে নিবেই, হয়তো কখনোই কেউ পারবে না। আমারও অনুভূতি আছে, আবেগ আছে, আছে মন...।। কষ্ট লাগার অনুভূতিটা আমারও আছে, কষ্ট আমারও লাগে। অনুভূতি শূন্য আমি নই...।। 

খুব ছোট বেলা থেকেই একা একা বড় হয়েছি, খেলার সাথী ছিল না, ছিল না আড্ডা দেওয়ার মতো কেউ। Varsity Life-এ এসেও ঘুরা-ঘুড়ি, আড্ডা দেওয়া কি টা আমি এখনো বুঝি না...।। আমার মনে পড়ে না  Varsity Life-এ উঠে Varsity-তে বসে ৩-৪ জন বসে কখনো আড্ডা দেওয়া হয়েছে কিনা...।।
               আমি কতো একা,
      কতোখানি ক্ষত আর ক্ষতি নিয়ে
বেদনার অনুকূলে প্রবাহিত আমার জীবন...।।

মাঝে মাঝে মনে হয় আমি নেই, নেই আমার অস্তিত্বে...।।