বর্তমান যুগে রিলেশন, ভালোবাসা নিয়ে কিছু লিখতে বা বলতে আমার খুব ভয় লাগে, খুব হতাশা লাগে। কেমন যেন হাত কাপে, মুখ ফ্যাঁকাশে হয়ে যায়, কেমন যেন অস্বস্তি লাগে। বর্তমান যুগের রিলেশন গুলি কেমন যেন নড়বড়ে হয়ে থাকে। একটু দমকা বাতাসে হুট করে ভেঙ্গে যায়, অনেক সময় বাতাসের দরকার হয় না। কারণ, এ রিলেশন গুলো হুট করে হয়ে থাকে। যা সহজে এসে তা সহজেই চলে যায়। কেউ কাউকে নিয়ে ভাবার সুযোগ পায়না, Actually-কেউ কাউকে নিয়ে ভাবতে চায় না। অতো সময় নেই হয়তো। আর সময় পেলেও কাজে লাগায় না। সময় পাবেই বা কিভাবে...??!! তাঁরা তোঁ ভালোবাসতে নয়, "পটাতে" ব্যাস্ত। কাউকে আজ পছন্দ হলো, কাল ভোর হতে না হতেই প্রপোজ করে ফেলে। Facebook-এ দুই দিন কথা বলতে না বলতে তার প্রেমে পড়ে যায়, তৃতীয় দিন তাকে প্রপোজ করে ফেলে। ঐ মানুষটার সম্পর্কে জানার কোনো প্রয়াস নেই, কোনো উৎসাহ নেই, প্রয়োজন নেই। যার ফল স্বরূপ কিছুদিন যেতে না যেতেই একটু মৃদু বাতাসে সম্পর্কটা ভেঙে যায়। এখনকার যুগের ভালোবাসার মাঝে সন্মান বোধ নেই। আছে শুধু Ego, তাকে Dominating-করার প্রবণতা, নিজে কিভাবে বড় থাকা যায় আর তাকে কিভাবে ছোট করা যায় এই চিন্তা-চেতনা। যে ভালোবাসার মাঝে Ego, Dominating, আত্ন-সন্মানবোধ বেশি থাকে সেই সম্পর্কের নাম কখনোই ভালোবাসা হতে পারে না। Ego, Dominating, আত্ন-সন্মানবোধ আর "ভালোবাসা" একসাথে কখনোই সম্ভব না। যে কোন একটাকে তোমার বেছে নিতে হবে। তোমাকে সে একটু রাগ দেখিয়ে কথা বললো, একটু ধমকের শুরে কথা বললো, একটু অপমান করলো আর সাথেই সাথেই তোমার  Ego-তে লেগে গেলো...!!! তুমি যদি এই সময় ভাবো যে তোমার আত্ন-সন্মানে লেগেছে; তাহলে তোমাকে আমি লিখে দিতে পারি তুমি তাকে কখনোই ভালোবাসো না। এই Simple-কথা সহ্য করার ক্ষমতা যদি না থেকে থাকে তোমার তাহলে কিভাবে তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার চিন্তা করো, তাকে নিয়ে ভবিষ্যতে এক সাথে ঘড় করার চিন্তা করো...??!! যে তোমাকে ভালোবাসে, যাকে তুমি ভালোবাসো অবশ্যই তোমার প্রতি তার & তার প্রতি তোমার অধিকার আছে কিছু বলার, শাসন করার। তার অধিকার আছে বিধায়ই সে কথা বলার Right- পেয়েছে। বাহিরের কেউ কিন্তু এসে তোমাকে কিছু বলে যায়নি। তোমার যদি এতে আত্ন-সন্মানে লাগে তাহলে বাহিরে মানুষ আর তোমার এই ভালোবাসার মানুষের মধ্যে পার্থক্য কি...?? নিজেকে একটি বার প্রশ্ন করো...

কারোর সাথে রিলেশনে জড়ানোর আগে একবারের জন্য হলেও ভাবা উচিৎ। তার সম্পর্কে জানা উচিত, তার পছন্দ - অপছন্দ সম্পর্কে জানা উচিত। তার মনের সাথে নিজের মন মিলিয়ে নিতে পাড়বে কিনা, তার ইচ্ছা কাছে নিজের ইচ্ছার ত্যাগ স্বীকার করতে পাড়বে কিনা তা খুব ভালো করে মিলিয়ে নেওয়া উচিত। তাকে পাওয়ার জন্য কতোটা কষ্ট, কতোটা ত্যাগ স্বীকার করতে পাড়বে তা খুব ভালো করে নিজের মনের কাছ থেকে জেনে নেওয়া উচিত। তার সাথে সারা জীবন সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে চলতে পারবে কিনা, একটা ঘড়ে উভয়ে মিলে একসাথে শান্তিতে এক প্লেট ভাত আহার করতে পারবে কিনা, এক ছাদের নিচে উভয়ে মিলে ভালোবাসার তাজমহল তৈরি করতে পারবে কিনা, হাতে হাত রেখে একসাথে জীবন পাড়ি দিতে পারবে কিনা এগুলো খুব ভালো করে নিজের মনের সাথে বুঝে নেওয়া উচিত। এগুলো নিজের মনের সাথে নিজেকেই বুঝে নিতে হবে, কেউ তোমাকে এগুলো বুঝিয়ে দিয়ে যাবে না। আর এগুলো বোঝার জন্য, জানার জন্য, তার মন বোঝার জন্য অনেকটা সময়ের দরকার। একদিন নয়, দুই দিন নয়...প্রয়োজন কয়েক মাস, অনেক সময় কয়েক বছর। প্রয়োজনে তার চেয়ে বেশি সময় নেওয়া উচিত। হুট করে "ভালোবাসি" বলে দেওয়াটা মোটেই উচিত নয়। আবার এতো বেশি সময় নিয়ো না যখন সে অন্য কারো হয়ে যায়। সম্পর্ক শুরু করার আগে যতো বুঝে নেওয়া যায় নাও, সম্পর্কে জড়ানোর পর পিছন দিকে ফিরে তাকানোর উপায় নেই।

কিছু কিছু সম্পর্ক অনেক মজবুত হওয়ার পরও টিকিয়ে রাখা যায়না। কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পরই কেউ হাল ছেড়ে দেয়। সম্পর্কের মাঝ থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, সম্পর্কে প্রতি সন্মান বোধ থাকে না। এক তরফা ভালোবাসা যাকে বলা হয়। একজন মনে প্রাণে ভালোবাসে আর অন্যজন শুধু দেখে যায়।

মানুষটাকে ভালোবাসার আগে ভেবে নেওয়া উচিত এই মানুষটির জন্য তুমি অপেক্ষা করতে পারবে কিনা। ভালোবাসার চেয়ে অপেক্ষা করা অনেক বেশি কঠিন। আমি বলবো ভালো কম বাসো তাতে ক্ষতি নেই, কিন্তু তাকে পাওয়ার জন্য যে অপেক্ষা করা দরকার সেই সাহস, শক্তি, ইচ্ছা, মনের জোড় যেন মনে থাকে সবসময়। 

অনেকেই বলেন- নিজের সমবয়সী কোনো মেয়ে বা ছেলের সাথে রিলেশনে না জড়াতে। আমি বলবো না সমবয়সী কারো সাথে রিলেশনে জড়াতে, আবার এটাও বলবো না সমবয়সী কারো সাথে রিলেশনে না জড়াতে। তবে সমবয়সী রিলেশনে মন ভাঙ্গার আওয়াজ স্পষ্ট শুনা যায়। কিন্তু মনের জোড় থাকলে এই মন ভাঙ্গার আওয়াজ শুনতে হয় না। তুমি যখন সমবয়সী কারো সাথে সম্পর্কে জড়াচ্ছ তোমাকে খুব ভালো করেই মাথায় রাখতে হবে সেই মানুষটাও তোমার একই বয়সী। কিছু দিন পর যখন কিছু বিপদ, কিছু তীর-ছোড়া কথা গায়ে লাগবে, পরিবারের চাপ সামনে আসবে তখন তুমি তোমার সেই মানুষটির সাথে কেমন ব্যবহার করবে, কি Expect-করবে তার কাছ থেকে...?? তোমাকে এটা খুব ভালো ভাবেই মাথায় রাখতে হবে তার কাছ থেকে কিছু Expect-করার নেই, যা করার তোমাকেই করতে হবে। তোমাকে এটা বুঝতে হবে এই সময়ে তার করার কিছুই নেই, তাকে কিছু করার জন্য কিছু সময় দরকার। একটা সময় দরকার যে সময়টায় সে কিছু করতে পাড়বে তোমার জন্য। তাকে তোমার সেই সময়টা দিতে হবে, সেই সময় পর্যন্ত তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে যদি তুমি তাকে নিজের করে পেতে চাও, যদি তুমি তাকে সত্যি মন থেকে ভালোবেসে থাকো।

কি ভাবচ্ছো অনেক কঠিন...? না...যদি তার প্রতি ভালোবাসাটা সত্যি মন থেকে হয়ে থাকে তবে এটা তেমন কোন কঠিন কাজ নয়। তোমাকে এটাও মাথায় রাখতে হবে এই সময়টিতে তোমাকে অনেকে অনেক কিছুই বোঝাবে। অনেকে বলবে ছেলেটার ভবিষ্যৎ নেই, Future-এ কি করবে, Established- আদৌ হতে পাড়বে কিনা...এরকম আরো অনেক কিছু। যা তোমার মনটাকে দুর্বল করে দিবে, মনে যে সাহস ছিল তা আসতে আসতে কমিয়ে দিবে। আমি তোমাকে শুধু একটি কথাই বলবো তুমি যদি তাকে ছেড়ে যাও তার জীবনেও একটা সময় কেউ আসবে। সেও তার পরিবারের সকল ভার বহন করবে, পরিবার Maintain-করবে একটি সময়। প্রতিটা মানুষই কিছু না কিছু করে, করতেই হয় জীবিকার তাগিদে। শুধু তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে সেই দিনটির জন্য। তাকে তোমার জন্য কিছু করার জন্য সময়, সুযোগ দিতে হবে। এতোটুকু কি পাড়বে না...?? অবশ্যই পাড়বে যদি ভালোবাসাটা সত্যি থেকে থাকে, ভালোবাসাটা মন থেকে হয়ে থাকে। শুধু তার হাতটি ধরো শক্ত করে আর তাকে সাহস দাও।। তোমার এই মুহূর্তে যে শক্তিটা প্রয়োজন তা তোমাকে তোমার ভালোবাসা জুগাবে। এই শক্তিটা যে কতোটা শক্তিশালী তা তুমি নিজে নিজেই বুঝতে পাড়বে প্রতিটা মুহূর্তে।। আর যদি এতো কিছুর মুখোমুখি হওয়ার সাহস না থেকে থাকে মনে, ভয় হয় তবে শুরুতেই কেটে পড়ো তুমি। ভালোবাসার পথে হাটার দরকার নেই, ভালোবাসা তোমার জন্য নয়...।। 

ভালোবাসা হলো শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত প্রিয় মানুষের চোখের জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পরার দৃশ্যটা উপভোগ করা। তার বিপদের সময়ে তার হাত শক্ত করে ধরে রাখা। ভালোবাসা হলো প্রিয় আর প্রিয়ার খুনসুটি। ভালোবাসা হলো প্রিয় আর প্রিয়ার মুখে আনন্দের হাসি...।।


জীবনে কতো কিছুই না ঘটছে। কিছু ঘটনা আমাদের মন ছুঁয়ে যায়, মনে দাগ কাটে, মন খারাপ করিয়ে দেয়। কখনো কখনো বিনা কারণেই মন খারাপ হয়। বিষন্ন লাগে, উদাস লাগে, শূন্যতা ভর করে মনে। কিছুতেই যেন মন বসতে চায় না কিছুতে। অতি প্রয়োজনীয় কাজও হয়ে যায় অপ্রয়োজনীয়।  এই সময়টায় আমরা কেউ একজনকে খুঁজি মনের অজানতেই। "মন খারাপের সময় কেউ যদি এসে তোমাকে প্রশ্ন করে - "মন খারাপ..?" তাহলে সেই মানুষটাকে চিনে রাখো, খুব ভালো করে চিনে রাখো...।। 

তোমার মন খারাপ থাকা সর্তেও যাকে তুমি মন ভালোর কথা বলে চালিয়ে দিলে, কিন্তু সে তোমার চোখের দিকে তাঁকিয়ে বুঝে গেলো, তোমার কথা শুনেই বুঝে গেলো তুমি মিথ্যা বলছো। বার বার প্রশ্ন করে জানতে চাচ্ছে- কেন মন খারাপ..? কি হয়েছে..? ইত্যাদি ইত্যাদি...!! এ যেন নাছোড়বান্দা...।। তাহলে এই মানুষটাকে ভালো করে চিনে রাখো, পাড়লে ধরে রাখো।। নিজের কাছে আড়াল করে রাখো...। এই ব্যস্ত জীবনে মানুষ নিজেকেই সময় দিতে পারে না, অথচ সে তোমার মন খারাপের কারণ জানতে চাচ্ছে। তোমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সত্যিটা বের করতে চাচ্ছে। তোমার মনের কথাটি জানতে চাচ্ছে, তোমার দুঃখের ভাগীদার হতে চাচ্ছে। সেই মানুষটা আর যাই হোক না কেন তোমার জন্য বড় পাওয়া। তোমাকে বুঝতে হবে এই মানুষটির কাছে তুমি কতোটা দামী, তোমার মন ভালো রাখাটা কতোটা গুরত্বপূর্ণ তার কাছে, তুমি কতোটা গুরত্বপূর্ণ তার কাছে। তার অস্তিত্বে যতোটা না সে আছে, তার চেয়ে বেশি তুমি আছো তার অস্তিত্বে মিশে।

মানুষের সুখের ভাগীদার সবাই হতে চায় কিন্তু দুঃখের ভাগীদার কেউ হতে চায় না। ভালো সময়ে বুকে টেনে নিবে কিন্তু খারাপ সময়ে ফিরেও তাঁকাবে না। ভালো সময়ে তোমার পাশে মানুষের অভাব হবে না, কিন্তু খারাপ সময়ে দেখবে কেউ নেই, কিচ্ছু নেই।। একটি খড়খুটোও নেই...।। আনন্দের মাঝে হঠাৎ তোমার চুপ হয়ে বসে যাওয়ার দৃশ্যটা সবাই দেখবে কিন্তু কাছে এসে বিনয়ের সাথে সবাই জিজ্ঞাসা করবে না। কেউ জিজ্ঞাস করবে না- "কি হয়েছে..?" মন খারাপের সময় এই টাইপের প্রশ্নবোধক বাক্য সবার ভাগ্যে জুঁটে না। এই প্রশ্নবোধক বাক্যটি শুনতে ভাগ্য লাগে, কপাল লাগে। যে প্রশ্নটি করে তাকে হারিয়ে যেতে দিয়ো না। তাকে তোমার লাগবে, তোমার মন একমাত্র সেই ভালো করতে পাড়বে। তার প্রয়োজনে নয়, তোমার প্রয়োজনেই তাকে তুমি ধরে রাখো...তাকে হাড়ালে অনেক বড় কিছুই হাড়াবে...।। 

মানুষ নিজের আনন্দের গল্পটা শেয়ার করে যতটা না তৃপ্তি পায়, তার চেয়েও কষ্টের গল্পটা শেয়ার করে বেশি তৃপ্তি পায়। কারণ, দুঃখের গল্পটা কেউ শুনতে চায় না। মানুষ দুঃখ শেয়ার করার সঙ্গী পায় না। দুঃখ শেয়ার করার জন্য খুব কাছের মানুষের দরকার হয়, খুব আপন মানুষের দরকার হয়। এমন একজন যে চুপটি করে বসে মনোযোগ দিয়ে তোমার দুঃখের কথা গুলো শুনবে, তোমার কান্না ভেজা চোখ দু'টো দেখে নিজের চোখ দুটোও অশ্রু সিক্ত করবে। তোমার দুঃখের সঙ্গী হবে...।। 

তোমার জীবনের আনন্দের গল্পগুলো হয়তো অনেকেই জানে, কিন্তু কতজন মানুষ তোমার কষ্টের গল্পটা জানে, তোমার মন খারাপের গল্প টা জানে..?? খোঁজ নিয়ে দেখো যে তোমার কষ্টের গল্পটা জানে সেই তোমার প্রকৃত বন্ধু, প্রকৃত আপনজন, প্রকৃত কাছের মানুষ !!" কেউ তোমার পাশে না থাকলেও হাত বাড়ালেই তাকে কাছে পাবে, কাউকে পাশে না পেলেও সে ঠিকই পাশে থাকবে ছায়ার মতো...।। 


MARI themes

Powered by Blogger.