ডায়েরীতে পুঞ্জিভূত কথা
যখন চারদিক স্তব্ধ হয়ে যায়, রাতের আঁধার নিকটে আসে, এরকম এক ক্ষণে ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে দূর আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে খুঁজে ফিরি লেখালেখির প্রতি আমার এতো ভালোবাসার কারণ। লেখার নতুন কিছু আইডিয়া নিয়ে ভাবতে গিয়ে এক সময় ঠাণ্ডা-গরম-ক্ষুধা-পিপাসা অনুভবের ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছি।মন ও মগজের হাজার-কোটি চিন্তা ও ভাবনা গুলোর মধ্য থেকে সবচেয়ে মুগ্ধতা সৃষ্টিকারী লেখাকে ধরতে চেয়েছি। মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকা হাজারো উপাদান থেকে সেরা গুলো বেছে আনতে আনতে চেয়েছি, লেখার জালে আটকাবো বলে। প্রিয়জনদের সঙ্গে যখন আড্ডা দিয়েছি, সেখানেও লেখার উপকরণ খুঁজেছি! তাদের চোখে, মুখে লেখার উপাদান খুঁজেছি। যখন ঘুরতে বেড়িয়েছি, হাটার ছলে বা গাড়িতে জানালার পাশে বসে লেখার উপাদান কুড়িয়েছি। একটিই আশা যদি লেখাতে আরও একটু নতুন কিছু এনে দেওয়া যায়। কোন কাজে কেউ পৌঁছানোর আগেই আমি পৌঁছে গিয়েছি শুধু কল্পনা ও বাস্তবে পাওয়া কয়েকটি লাইন লিখবো বলে। কল্পনা আর বাস্তবকে এক করবো বলে।
লেখালেখির মাধ্যমে দৃশ্যমান কোন প্রাপ্তি আমার নেই। টাকা, সম্পদ, সার্টিফিকেট, পদক, পুরস্কার, প্রতিবেদন কিছুই জোটেনি কপালে। কিন্তু এই লেখালেখি যা দিয়েছে তা আজ পযন্ত আর কিছু থেকে পাইনি। লেখালেখিটা শুরু নিজের মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য। খুব কি অবাগ লাগচ্ছে...?!! মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করে মানুষের কাছে, আর আমি কিনা লেখালেখি করে প্রকাশ করি !! বাস্তবিক অর্থে একজন Introvert Person-হওয়ার জন্য খুব কম সংখ্যক মানুষকে নিজের মনে Access-দিয়েছি, এতোটাই কম যে গুনে গুনে বলা যাবে। আর এই সকলকেই নিজের জীবনের অংশ ভেবেছি, খুব আপন, কাছের মানুষ ভেবেছি। কিন্তু নিজের মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য এদের কাছে সময় পাইনি। তাদের ব্যস্ততা হোক বা তাদের অন্য কাছের মানুষদের নিয়ে সময় কাটাতে হোক না কেন আমার মনের মতো করে সময় তাদের মাঝে পাইনি। সেই ২০১০- সাল থেকে একটু একটু করে লিখালিখি শুরু। ডায়েরী থেকে লিখালিখি পরবর্তীতে তা ২০১৫- তে এসে ব্লগে রূপান্তর। কিন্তু সেই ২০১০- সালে আমার সব চেয়ে প্রিয় হলুদ ডায়েরী টার মতো তৃপ্তি আর কিছুতে পাই নি। আমার সব চেয়ে কাছে যদি কেউ হয়ে থাকে তবে আমি বলবো আমার সেই হলুদ রঙ এর ডায়েরী।
এতো দিন পর এসে ব্লগে লেখালেখির আগ্রহটা হথাৎ হারিয়ে ফেলচ্ছি, কেমন যেন কমে যাচ্ছে। এই সময়টায় আমার ভাবনায় আসলো কিছু অনুভূতি একান্তই নিজের ব্যক্তিগত যা নিজের ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লিপিবন্ধ করা উচিত। এই সময় এসে নতুন কালো রঙের একটা ডায়েরী কিনা হলো শুধু ব্যক্তিগত কিছু লিপিবন্ধ করার জন্য। এটা যে খুব বেশি দিন যাবত তা নয়। গত ৩-৪ মাস যাবত। এই সময়টায় কেমন যেন লিখার ইচ্ছেটা মরে যেতে থাকে। তবে এটা সত্য বিগত ৩-৪ মাস নিজেকে খুব বেশি ব্যস্ত রাখতে চেয়েছি & আল্লাহর অশেষ রহমতে সফল হয়েছি। নিজেকে ব্যস্ত রাখার পিছনে যদিও ব্যক্তিগত কারন ছিল। কিন্তু ব্যস্ত রাখতে সফল হলেও নিজের মনের শান্তিটা হারিয়েছি। এই শান্তিটা হারানোর পর ভেবে দেখলাম আমি আর লিখতে পারচ্ছি না। কিছু লিখবো তো দূরেই থাক, মাথায় একটি লাইন আসচ্ছিল না। জীবনের সব চেয়ে বাজে সময়টা মনেহয় এটাই ছিল, খুব বেশি নিরুপায় ছিলাম, হতাশ ছিলাম। মাঝে মাঝে এ অবস্থায় আমার প্রচণ্ড অস্থির লাগতো, দম বন্ধ হয়ে আসতো কিন্তু একটি মানুষকে পাইনি যাকে কথা বলে একটু হালকা হবো। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর বুঝতে পারলাম এভাবে আর হচ্ছে না। আমার একজন ভালো Psychologist-এর সাথে কথা বলা দরকার। Dhaka University-এর একজন Senior Psychologist-এর Appointment-পেতে প্রায় এক মাস সময় লেগে গেলো। এই সময়টায় আমি ভাবতে লাগলাম একটা মানুষ কতোটা অসহায়,খারাপ অবস্থায় পরিণত হলে সে Psychologist-এর কাছে আসে। পুরো ৪৫ দিন তার কাছ থেকে কিছু বিষয় শিখলাম, Therapy-নিলাম। তার কাছ থেকে প্রথম প্রশ্ন ছিল-"আপনি নিজেই একজন মানুষ যে মানুষকে Motivate- করেন জীবনের Positive - Negative- বিষয় গুলো নিয়ে, এমনকি বেশির ভাগ সেগুলো Relation-নিয়ে, সুখ-দুঃখ এগুলো নিয়ে; আর আপনি কিনা আজ Psychologist-এর কাছে!!"তখন আমার অসহায় মুখটা দেখে সে বুঝেতে পেরেছিলেন আমি কি বলতে চাচ্ছি। তার কাছ থেকে কতোটা উপকার হলো জানি না তবে এটা সত্য একটু হলেও বুঝতে পেরেছিলাম বাস্তব আর কল্পনা এক নয়, একটু হলেও স্বস্তি পেয়েছিলাম, একটু হলেও নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছিলাম। এতটুকু বুঝতে পেরেছিলাম জীবন থেমে থাকে না, কারো জন্যই নয়, শুধু থেমে যায় মনটা। লেখালেখি টা কিছুটা হলেও ফিরিয়ে আনতে পারলাম, তবে সেগুলো ডায়েরী তেই লিপিবন্ধ করে রাখলাম নিজের মনের খুব গভীরের পুঞ্জিভূত কথা। তবে এটা সত্য সে হাজার চেষ্টা করেও আমাকে Extrovert-এ Convert- করতে পারলেন না। মনের শান্তি সেই যে হারালাম আর ফিরে আসেনি। তখন বুঝতে আর বাকি নেই আমি আমার এই ছোট্ট ব্লগ, কালো রঙ এর ডায়েরী কতোটা বেশি ভালোবাসি। যা ছাড়া আমি অচল, অনেকটা আমার নিঃশ্বাস এর মতো।
মানুষের কাছে মনের ভাব প্রকাশ করতে চাইলে হয়তো ব্যস্ততার অযুহাত দেখাবে, বিরক্ত হবে বা বিরক্তির শুরে কথা বলবে কিন্তু এই লেখা গুলো, এই ব্লগ, এই ডায়েরী কখনোই অযুহাত দেখাবে না। কাউকে মন থেকে ভালবাসলে সে হয়তো আপনাকে গ্রহন নাও করতে পারে কিন্তু লেখার এই ডায়েরী ঠিকই গ্রহন করবে, মনে রাখবে, ভালোবাসবে। দিন শেষে হয়তো মানুষের কাছে ভালবাসার, ভালোলাগার মানুষ পরিবর্তন হয় কিন্তু ভালোবাসার ডায়েরী কখনোই পরিবর্তন হয় না, পুঞ্জিভূত কথা পুঞ্জিভূতই রয়ে যায়।
মানুষের কাছে মনের ভাব প্রকাশ করতে চাইলে হয়তো ব্যস্ততার অযুহাত দেখাবে, বিরক্ত হবে বা বিরক্তির শুরে কথা বলবে কিন্তু এই লেখা গুলো, এই ব্লগ, এই ডায়েরী কখনোই অযুহাত দেখাবে না। কাউকে মন থেকে ভালবাসলে সে হয়তো আপনাকে গ্রহন নাও করতে পারে কিন্তু লেখার এই ডায়েরী ঠিকই গ্রহন করবে, মনে রাখবে, ভালোবাসবে। দিন শেষে হয়তো মানুষের কাছে ভালবাসার, ভালোলাগার মানুষ পরিবর্তন হয় কিন্তু ভালোবাসার ডায়েরী কখনোই পরিবর্তন হয় না, পুঞ্জিভূত কথা পুঞ্জিভূতই রয়ে যায়।