অপূরণীয় অভাব

"প্রিয় মানুষটার অভাব কখনো অন্য কাউকে দিয়ে পূরণ করা যায় না। ঠিক এই মুহূর্তে আপনি যার সাথে আছেন তার অনুপস্থিতিতে আপনি আর নতুন কাউকে দিয়ে পূরন করতে পারবেন না সে যতই ভালো মানুষ হোক না কেন। যদি পারেনও তবুও আপনার মনে হবে কোথায় যেন কিসের শূন্যতা ঠিকই রয়ে আছে ।।

এই শূন্যতা একদিনেই কারো জন্য তৈরী হয়না। কারো সাথে চলতে চলতে একটা দীর্ঘ সময়ের পর এই শূন্যতা অনুভব করা যায়। মানুষ কখনো দু'দিনের পরিচয়ে কারো জন্য কষ্ট পায়না, কাঁদে না। মানুষ তখনই কষ্ট পায় কিংবা কাঁদে যখন তার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিন্ন করে কেউ চলে যায় ।।

বন্ধুদের সাথে মুভি দেখতে দেখতে হঠাৎ তার কথা মনে পড়বে। কিংবা রিকশাতে পাশের সিটটাতে তাকে অনুভব হবে অথবা ফেইসবুকেও অনেকের সাথে কথা হলেও ঐ একজনের সাথে কথা না হলে কেমন যেন ফেইসবুকটাও পানসে মনে হবে। এসব যা কিছুই হোক না কেন একজনের অভাব অন্যকেউ পূরণ করতে পারেনা ।।

বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে একটা পর্যায় আমি কনের সামনে গিয়ে বসি। খুব আগ্রহ নিয়ে চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় নিশ্চিত করে বলতে পারি- এ মেয়েটি জীবনের কোন না কোন এক সময় আজকের এই দিনটিতে অন্য কাউকে চেয়েছিল।

শাড়ি ঠিক করতে গিয়ে , টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে গিয়ে, ক্যামেরার দিকে তাকাতে গিয়ে কোন এক ফাঁকে কী সেই মানুষটির কথা তার মনে পড়ে ??? আমি তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি। কোথায় যেন পড়েছিলাম- প্রেম জন্ম নিলে মেয়েদের ঠোঁটের দু.পাশ শক্ত হয়ে কিছুটা উপরের দিকে উঠে যায়। একটি অচেনা মেয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা কিছুটা বিব্রতকর। শুধু মাত্র কনের দিকে তাকিয়ে থাকা যায়। এই তাকানো বৈধ। আমি বৈধ ভাবে কনের ঠোঁট এবং চোখের দিকে তাকাই। সিগমান্ড ফ্রয়েড প্রায় ৩০ বছরের গবেষণার পর আক্ষেপ করে বলেছিলেন ''নারী কি চায় আমি জানি না"
“Was will das Weib?” ''নারী কী চায়?" যে ছেলেটি বিয়ে করছে আমি তাকেও দেখি। আজ রাতে বাসর হবে। কি কথা হবে সব কী আগে থেকে সাজানো ? আমরা আমাদের নিজস্ব গণ্ডি থেকে বের হতে পারি না।

যে মানুষটা তার স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ের পর দার্জিলিং এ যাওয়ার Plan- করে। সে নিশ্চয়ই এক কালে তার কোন প্রেমিকাকে রাত দিন বলেছিল - কটা দিন অপেক্ষা করো। বলেছিল - সমরেশ মজুমদার এককালে যে হোটেলে বসে দার্জিলিং এর আকাশ দেখেছে তারা সে হোটেলটিতে উঠবে। স্ত্রীকে সাথে নিয়ে সমরেশের আকাশ যখন দেখা হয় সেখানে শুধুই কী পাশে বসে থাকা মানুষটি থাকে ? আকাশের অলিতে গলিতে এক কোণে কোথাও কী সেই দিনের মেয়েটি থাকে না ? জানি না আমি, কখনো কাউকে জিজ্ঞাস করিনি।

শৈশবের কোন মেয়েকে না পেয়ে যে ছেলেটা ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে বমি করেছিল, বার বার চেষ্টা করেও বলতে না পারার অপরাধে হাত ছাড়া হয়ে গেল। সিনেমার কোন রোমান্টিক দৃশ্য দেখে যে মেয়েটি কেঁদেছে একা একা। এইসব কান্না একদিন শেষ হয়। ইতিহাস ঘেটে দেখো, কাউকে না পেয়ে দু'দিন দরজা বন্ধ করে শুয়ে থাকা, দু'দিন না খেয়ে থাকা , সাহসের অভাবে ছাদ থেকে লাফিয়ে মরতে না পারা মানুষ গুলো এক সময় স্বাভাবিক হয়ে উঠে। প্রত্যেকে হাসি হাসি মুখে কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে করে। ডেকারেশন ঠিক মত হয়েছে নাকি সেই তদারকিও করবে। পরিসংখ্যান তাই বলে।

আপনার আশে পাশের ব্যার্থ প্রেমিক অথবা প্রেমিকাদের দিকে তাকান। ক্যালেন্ডারে একটা দাগ দিন। নিশ্চিত থাকুন এরা প্রত্যেকেই একদিন হাসি হাসি মুখে কমিউনিটি সেন্টারে যাবে। প্রত্যেকেই একদিন স্বাভাবিক হবে। শুধু কিছু একটা থেকে যাবে। সেই একটা কিছুর ভেতরে কোন কিছুই নেই। ' কোন কিছু নেই' এর ভেতরে আবার একটা কিছু থাকে।

আগুন নেভানোর পর আগুন নিভে যায় তবু একটা লালাভ ফুল্কি থাকে। সেটা আগুন না। আগুনের ছায়া। পৃথিবীর সবকিছুর অভাবই কোন না কোন কিছু দিয়ে পূরণ করা যায় কিন্তু মানুষের অভাব অন্য কোন মানুষ দিয়ে কখনো পূরণ করা যায় না। যে চলে যায় বা হারিয়ে যায় তার অস্তিত্ব ওখানেই শেষ। তার অস্তিত্ব নিয়ে অন্যকেউ আসেনা। এ জন্যই মানুষের অভাব অপূরণীয় !!"