স্বপ্নভাঙ্গা

অনেক ভালোবাসার পরও আমরা ভালোবাসার মানুষকে হারাই, ভালোবাসার মানুষকে বুঝতে না পারার জন্য।
ভালোবাসার মানুষের স্থান, মূল্য, Priority- কতোটুকু সেটাই আমরা বুঝে উঠতে পারি না।

সারাজীবন একসঙ্গে পথা চলার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ভালোবাসা হঠাৎ একটা দমকা হাওয়াতে ভেঙে গেলে, সে আঘাত সহ্য করতে না পেরে করা পাগলামী গুলো মোটেই অস্বাভাবিক না আমার কাছে। আমি এগুলো দেখে মোটেও অবাক হই না।কেউ হাত কাঁটছে, কেউ ডায়রীর পাতা ছিড়ছে, কেউ কেঁদে কেঁদে বালিশ ভেজাচ্ছে, কেউ ঘুমের ওষুধ খাচ্ছে, কেউ সিলিং ফ্যানে দড়ি ঝুলিয়ে রাখছে, কেউ নতুন সিগারেট ধরছে, কেউ হাত পা ছড়িয়ে চিৎকার করছে, কেউ দু'চার দিন না খেয়ে আছে, কেউবা কিছুই না করতে পেরে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছে। এগুলো মোটেও অস্বাভাবিক না।এগুলো মোটেই বোকামী না।এগুলো মোটেই সস্তা আবেগ না।

মানুষ যতটা না ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে কষ্ট পায় তার চেয়ে বেশি কষ্ট পায় মানুষটার সাথে অতীতে ঘটে যাওয়া কিছু ভুল স্মৃতি গুলোকে ভুলে যাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে। ভুল স্মৃতি গুলোকে যতই ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করা হয় স্মৃতিটা ততই ভয়ংকর রূপ ধারণ করে বার বার সামনে চলে আসবে।স্মৃতি কখনো ভুল হয় না, তবু ভুল বললাম কারণ হারিয়ে যাওয়ার পর সব কিছুই ভুল মনে হয়।

কত স্বপ্ন থাকে সম্পর্ক নিয়ে...! সপ্ন গুলো অনেক টা নিজ হাতে কোন কিছু বেড়ে উঠার মতো। বিয়ে করবে, নতুন সংসার হবে, ছোট্ট একটা ঘর হবে।দু'জনে মিলে একসাথে সাজাবে সেই ঘরটা। দেয়ালে দু'জনের ছবি থাকবে।টিভির রুমটায় দু'জন বসার মতো একটা সোফা থাকবে। সপ্তাহের শেষ দিন ওই সোফায় বসে মুভি দেখবে। রান্না শেখার চেষ্টা থাকবে। হাত-পুড়িয়ে রান্না করবে। তেল কম হবে, লবণ বেশী হবে, খাওয়া যাবে না তবুও ভালোবেসে খেয়ে নেবে। অফিসে যাবার সময় টাই বেধে দেবে। অফিসে গিয়ে মিস করবে, বার বার ফোন দেবে। বাসায় ফেরার সময় একটা বকুল ফুলের মালা নিয়ে আসবে।

পড়ন্ত বিকালে দু'জনে মিলে বাইরে যাবে।পছন্দের নীল শাড়ী-পাঞ্জাবী পরবে। বেশী ঝাল-টক দিয়ে ফুসকা খাবে। রাস্তায় হাটতে হাটতে হঠাৎ করে আঙ্গুলটা ধরে বসবে। গাড়ির সীটে বসে কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাবে। অসুস্থ হলে রাত জাগবে, আহ্লাদ করে খাইয়ে দেবে।

ছেলে-মেয়ের নামও রাখা হয়ে যায়। ঝড় ঝাপটায় একই ছাতার নিচে থাকবে।বয়স বাড়ার সাথে সাথে সময় মতো ওষুধ খাইয়ে দেবে। প্রেসার মেপে দেবে। বৃদ্ধ বয়সে ঘোলাটে চশমাটা মুছে দেবে। স্পর্শে মানুষটা না থাকলেও বিধাতার কাছে করা প্রতিটা প্রার্থনায় মানুষটা থাকবে। দেয়ালে টাঙানো ছবিটা হাতে নিয়ে বার বার হাত বুলিয়ে স্পর্শ পাওয়ার চেষ্টা করবে। চোখটা ভারী হয়ে আসবে, চশমাটা ভিজে যাবে। ধরা যাবে না, ছোয়া যাবে না; তবু মানুষটা থাকবে প্রতিটা স্পন্দনে..।

এত সাধের স্বপ্ন গুলো ভেঙে যাবার পর কেউ স্বাভাবিক থাকতে পারে না। এই সময়টাতে আপনি তাকে ম্যাচিউরিটি শেখাতে যাবেন না, স্বপ্নভাঙ্গা বিধ্বস্ত মস্তিষ্কে ম্যাচিউরিটি আসে না।আপনি হয়তো তাকে ইমম্যাচিউরড পাগল বলবেন।কিন্তু তার কাছে- এই ইমম্যাচিউরিটি এবং পাগলামী গুলোই ভালোবাসা।

কয়েকশো বছরের অগ্রিম দেখা স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার যন্ত্রনা সহজে মেনে নেয়া যায় না, কখনোই না, কেউ-ই মেনে নিতে পারে না।