শুধুমাত্র ঝগড়া, কথা কাটাকাটির সূত্র ধরে আমি বেশকিছু সম্পর্ক ভাঙতে দেখেছি। আমাদের সমস্যাটা হলো, আমরা যখন কারো সাথে নিজেকে জড়াই, তখন শুধু তার ভালো দিকটা ভেবেই জড়াই, কিন্তু তিতা সত্যি হল- সম্পর্কে জড়াতে হলে আমাদেরকে মানুষটার খারাপ দিকটার সাথেও জড়াতে হবে। কেননা, পৃথিবীতে কেউ শতভাগ পারফেক্ট হতে পারে না, আমরা কেউ এখানে পারফেক্ট না। আমি না, তুমি না, সে ও না..।।
একজন মানুষ তোমাকে প্রতিনিয়ত সুখে রাখতে পারবেনা। কেননা, আমাদের জীবনটা কোনো সরল রেখায় চলেনা, এমনকি সরল রেখাও সরল না। এখানে নানাবিধ জটিলতা আছে। ইচ্ছাকে অনিচ্ছায় রূপ দেওয়া, অনিচ্ছাকে ইচ্ছায় রূপ দেওয়ার মত কঠিন কাজ এখানে খুব যত্ন সহকারে করতে হয়। সবসময় মন মেজাজ নিয়ন্ত্রণে থাকেনা। আমার থাকেনা, তোমার থাকেনা, তার ও থাকেনা। ব্যাপারটা তোমাকে বুঝতে হবে। একজন মানুষ কোন পরিস্থিতিতে আছে, সে কোন পরিস্থিতিতে কি আচরণ করছে সেটা বুঝতে হবে। বুঝতে না পারলে চুপ থাকতে হবে, মানুষটাকে বোঝানোর জন্য সময় দিতে হবে, মানুষটাকে বুঝতেও সময় দিতে হবে। তবে বুঝা অবুঝের মতো আচরণ করলে চলবে না।
মানুষটার ভালো দিক যেমন তোমাকে আনন্দ দেয়, খারাপ দিক তোমাকে কষ্ট দিবে - এটাই স্বাভাবিক। তুমি ভালো দিক, ভালো ব্যবহার মেনে নিবে কিন্তু খারাপ কিছুই মানতে পারবে না তা তো হয় না। যে মানুষটা তোমাকে আজ কাঁদাচ্ছে, যার কথায় আজ চোখে জ্বল চলে আসছে তার জন্য তুমি জীবনে কঠিন কঠিন সময়ে হেসেছো, তার হাসি মুখের দিখে তাকিয়ে নিজেকে সব চেয়ে সুখি একজন মানুষ ভেবেছো- এটা ভুললে চলবে না। তোমাকে বুঝতে হবে, রাগ-ঝগড়া-কথা কাটাকাটি ছাড়া কখনো কোনো সম্পর্ক হয় না। এটা সম্পর্কের একটা অংশ। যেই মা-বাবার সাথে আমাদের সবচেয়ে সুন্দর সম্পর্ক, তাদের সাথেও সেই ছোটবেলা থেকে অনেকবার অনেক রাগারাগি, কথা কাটাকাটি হয়ে গেছে।জীবনে বহুবার চিন্তা করা হয়েছে, বাসা থেকে চলে যাই, বাবা-মার সাথে আর কথা বলবে না... পেরেছো কি..? কিন্তু, তুমি যাকে ভালোবাসো বা তোমাকে যে ভালোবাসে তার সাথে সামান্য ঝগড়াতেই সম্পর্ক শেষ করে দেওয়ার সিধান্ত নিয়েছো। তবে কি শুধু রক্তের সম্পর্ক-ই টিকে থাকে বাকি সব সম্পর্ক মিথ্যে...?
বিশ্বাস করো, এই পৃথিবীতে যাকেই তুমি ভালোবাসবে, সে-ই তোমার সাথে ভুল আচরণ করবে। যার সাথে সম্পর্কে জড়াবে, সে-ই তোমাকে কোনো না কোনোভাবে কষ্ট দিবে। তুমি পৃথিবীর কোথাও, কারও কাছে নিরবচ্ছিন্ন সুখ পাবেনা।নিরবচ্ছিন্ন সুখও কিন্তু তোমাকে পূর্ণতা দিবে না। তোমাকে মানতে হবে, "ভুল ছাড়া মানুষ হয় না, কষ্ট ছাড়া ভালোবাসা হয় না"।
আর হ্যাঁ সবসময় নিজের দিক ভাবলেও চলে না। অনেক সময় অন্যদের কথা ভাবতে হয়।তুমি যে মানুষটার সাথে জড়িয়ে আছো সে মানুষটার উপর তোমার যেমন অধিকার আছে তার যেকোন বিষয়ে কথা বলার, ঠিক তেমনি তোমার বিষয়েও কথা বলার অধিকার সে রাখে। যদি তুমি ভেবেই থাকো তোমার সব কিছুর সিধান্ত তুমি একা নিজে আর তোমার বাবা-মা নিবে তাহলে তোমার ভাবা উচিত তোমর সাথে আরেকটা মানুষ জড়িত। তার কথাও তোমাকে ভাবতে হবে, তোমাকে ভাবতে হবে তারও কোন সিন্ধান্ত দেওয়ার থাকতে পারে তোমাকে নিয়ে। তুমি সর্বদাই চাইবে জিততে, সর্বদাই চাইবে তুমি সবার উর্ধ্বে থাকতে। তোমাকে কেউ কিচ্ছুটি বলতে পারবে না, কিন্তু কেনো..? ভেবে দেখো তো তুমি নিজে ১০০% ঠিক..? তুমি কি বাচ্চা..? আর সর্বদা জিতবে জীবনের এমন এক সময়ে হারবে তখন আর কোনো পথ খোলা পাবে না..।
মানুষটাকে ভালোবাসার আগে ভেবে নেওয়া উচিত এই মানুষটির জন্য তুমি অপেক্ষা করতে পারবে কিনা। ভালোবাসার চেয়ে অপেক্ষা করা অনেক বেশি কঠিন। আমি বলবো ভালো কম বাসো তাতে ক্ষতি নেই, কিন্তু তাকে পাওয়ার জন্য যে অপেক্ষা করা দরকার সেই সাহস, শক্তি, ইচ্ছা, মনের জোড় যেন মনে থাকে সবসময়। তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন তার প্রতি তোমার সন্মান বোধ কতোটা, তার ভালো থাকা, তার গুরুত্ব তোমার জীবনে কতোটা। তাকে ভালো থাকতে দেখতে চাওয়া আর তাকে ভালো রাখা এক জিনিস নয়। তুমি হয়তো চাও সে ভালো থাকুক কিন্তু ভালো থাকার জন্য যা করা দরকার তুমি ঠিক বিপরীতটাই করো। তাহলে এই চাওয়ার কোন বাস্তবিক অর্থ নেই।
নিজের জেদ, ভালোবাসা, তার প্রতি গুরুত্বহীন কখনই এক সাথে চলতে পারে না। কারোর সাথে রিলেশনে জড়ানোর আগে একবারের জন্য হলেও ভাবা উচিৎ। তার সম্পর্কে জানা উচিত, তার পছন্দ - অপছন্দ সম্পর্কে জানা উচিত। তার মনের সাথে নিজের মন মিলিয়ে নিতে পাড়বে কিনা, তার ইচ্ছা কাছে নিজের ইচ্ছার ত্যাগ স্বীকার করতে পাড়বে কিনা তা খুব ভালো করে মিলিয়ে নেওয়া উচিত। তাকে পাওয়ার জন্য কতোটা কষ্ট, কতোটা ত্যাগ স্বীকার করতে পাড়বে তা খুব ভালো করে নিজের মনের কাছ থেকে জেনে নেওয়া উচিত। তার সাথে সারা জীবন সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে চলতে পারবে কিনা, একটা ঘড়ে উভয়ে মিলে একসাথে শান্তিতে এক প্লেট ভাত আহার করতে পারবে কিনা, এক ছাদের নিচে উভয়ে মিলে ভালোবাসার তাজমহল তৈরি করতে পারবে কিনা, হাতে হাত রেখে একসাথে জীবন পাড়ি দিতে পারবে কিনা এগুলো খুব ভালো করে নিজের মনের সাথে বুঝে নেওয়া উচিত। এগুলো নিজের মনের সাথে নিজেকেই বুঝে নিতে হবে, কেউ তোমাকে এগুলো বুঝিয়ে দিয়ে যাবে না।
Post a Comment