আচ্ছা একটা মানুষের সবচেয়ে নোংরা অভ্যাস কি..? আমার মতে ইগো, জেদ।কোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইগো ঋণাত্মক প্রভাবক হিসাবে কাজ করে, কখনোই ভালো কিছু নিয়ে আসবে না । যতবেশি ইগো থাকবে ততবেশি সম্পর্ক খারাপ হবে এতা প্রমাণিত।
ধরুন, আপনারা দু'জন দু'জনকে ভালোবাসেন। কিন্তু কোনো কারণে একে অপেরের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন কেউ কাউকে স্যরি বলতে রাজি না।
এখন দু'জনেরই প্রশ্ন হলো:-
আমি কেন আগে কথা বলবো !? আমাকেই কেন প্রতিবার স্যরি বলতে হবে, সম্পর্কটাকে এগিয়ে নিতে হবে...? অর্থাৎ, আপনাদের মাঝে তৃতীয় জন হিসাবে ইগো, জেদ প্রবেশ করলো। সম্পর্কের চেয়ে ইগো অনেক বেসি দামি হয়ে গেলো। আপনি সম্পর্ক টাকে যতোটা না ভালোবাসেন তার চেয়ে বেশি ভালোবাসেন আপনার জেদ আর ইগো কে।
আচ্ছা আসলেই কি ইগো দামি, কতোটা দামি...?
তাহলে আপনার ফেসবুকের সার্চলিষ্টের প্রথমে প্রিয় মানুষটার আইডি কেন...? কেন বার বার চেক করা হয় ঐ আইডিটা...? কেনই বা রাত নামলে আপনাদের আত্মার তীব্র আর্তনাদ শুনা যায়...? কেনই বা বারবার চেক করেন সে কোন পোস্ট করেছে কিনা...? এসকল প্রশ্নের কোনো উত্তর আছে আপনার কাছে...? থাকবে বা কি করে আপনারা তো দুই'জন দুইজনকে সবসময় নিজেকে সুখী ও ব্যস্তময় আছেন দেখানোর নোংরা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, ভালো আছেন এটা দেখাতে ব্যস্ত। দু'জনেই এমন ভাব দেখাচ্ছেন যেন দু'জনেই অনেক ভাল আছেন। আসলে কতোটা ভালো আছেন তা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ কে জিজ্ঞাস করুন।ইগো দেখিয়ে কথা না বলাটা কোনো স্মার্টনেস না। ইগোপ্রবণ মানুষরা অনেক সময় সেল্প রেসপেক্ট ব্যাপারটিকেও ইগোর সাথে মিলিয়ে ফেলে।
একটা সম্পর্ক তৈরি করা কিন্তু খুব একটা কঠিন না। কঠিন কিন্তু এতো টাও না যতটা কঠিন ঐ সম্পর্কটাকে অটুট রাখা, টিকিয়ে দুইজন সুখে থাকা। ঝগড়া করে কথা বন্ধ রেখে আসলে কি হয় ! দূরত্ব বেড়ে যায় নিজেদের মাঝে, একটা সময় সেই দূরত্ব পাহাড় সমান হয়ে দু'টি পথ দু'দিকে চলে যায়। টিকিয়ে রাখার যদি ইচ্ছেই থাকে, যদি সত্যি তার জন্য ভালোবাসা থেকেই থাকে ,একজন না একজন ঠিকই দুইদিন পরে গিয়ে সরি বলে। ইগো ভেঙ্গে সরি যেহেতু বলবেনই, তাহলে ২ দিন কথা বন্ধ রাখার কিছু আছে ? ভাবুন তো একবার...
ইগো দেখিয়ে যে মানুষটার সাথে দূরে সরে আছেন সেই মানুষটার ভালো দিক যেমন আপনাকে আনন্দ দিয়েছে, খারাপ দিক আপনাকে কষ্ট দিবে - এটাই স্বাভাবিক। আপনি ভালো দিক, ভালো ব্যবহার মেনে নিবেন কিন্তু খারাপ কিছুই মানতে পারবে না তা তো হয় না। হাতের পাঁচ আঙ্গুল কখনোই সমান হয় না, তেমনি একটা মানুষের বর্তমান পরিস্থিতি, মনের অবস্থা এক হয়না। যে মানুষটার কথায়, ব্যবহারে আপনাকে কাঁদাচ্ছে, যার কথায় আজ চোখে জ্বল চলে আসছে, যার ব্যবহারে তাকে আজ ঘৃণার চোখে দেখছেন ভেবে দেখেন তার জন্য আপনি জীবনের অনেক কঠিন কঠিন সময়ে হেসেছেন, সে আপনাকে হাসিয়েছে, মানসিক ভাবে সাপোর্ট দিয়েছে। ভেবে দেখেন এই মানুষটা আর সেই মানুষটা একই মানুষ কিন্তু আপনি তার বর্তমান অবস্থা, মনের পরিস্থিতি না বুঝে তার থেকে দূরে সয়ে ঠিকি গিয়েছেন, আপনি ইগো টাকেই বড় করে দেখেছেন। কখনো হয়তো এটা বুঝতে চাননি এই মানুষটার হয়তো এখন সময় খারাপ যাচ্ছে, হয়তো সে অনেক বাজে পরিস্থিতিতে আছে। বুঝতে চাননি তার পাশে আপনার এখন থাকাটা বেশি প্রয়োজন, তাকে একটু মানুষিক ভাবে সাপোর্ট দেওয়া আপানার দরকার। এগুলো কিছুই না করে রাগের মাঝে তার কথা গুলো শুনে ঠিকই আপনি তার জীবন থেকে সরে গিয়েছেন। আপনার ভাষ্য মতে এটা কে কি ভালোবাসা বলে...?
আপনাকে বুঝতে হবে, রাগ-ঝগড়া-কথা কাটাকাটি ছাড়া কখনো কোনো সম্পর্ক হয় না। এটা সম্পর্কের একটা অংশ। কিন্তু, আপনি যাকে ভালোবাসেন বা আপনাকে যে ভালোবাসে তার সাথে সামান্য ঝগড়াতেই সম্পর্ক শেষ করে দেওয়ার সিধান্ত নিয়েছেন। তবে এটা ধরে নিন আপনি যাকে ভালোবাসেন তার চেয়ে আপনার ইগো, জেদ, আত্মসম্মান বোধ টাই বড়। সে আপনার জীবনে থাকুক বা না থাকুক তাতে আপনার কিছু আসে যায় না।
সবসময় নিজের দিক ভাবলেও চলে না। অনেক সময় অপর পাশের মানুষটির কথাও ভাবতে হয়। আপনি যে মানুষটার সাথে জড়িয়ে আছেন সে মানুষটার উপর আপনার যেমন অধিকার আছে তার যেকোন বিষয়ে কথা বলার, ঠিক তেমনি আপনার বিষয়েও কথা বলার অধিকার সে রাখে। যদি আপনি ভেবেই থাকেন আপনার সব কিছুর সিধান্ত আপনি একা নিজে আর আপনার বাবা-মা নিবে তাহলে আপনার ভাবা উচিত আপনার সাথে আরেকটা মানুষ জড়িত। তার কথাও আপনাকে ভাবতে হবে, আপনাকে ভাবতে হবে তারও কোন সিন্ধান্ত দেওয়ার থাকতে পারে আপনাকে নিয়ে। সে চাইতেই পারে আপনার সবচেয়ে কাছের মানুষটি যেন সে হয়, আপনার কোন বিপদে সেই যেন সবার আগে উপস্থিত হতে পারে, সে চাইতেই পারে আপনাকে চোখের আড়াল না করতে। আপনি সর্বদাই চাইবেন জিততে, সর্বদাই চাইবেন আপনি সবসময় আপনার সিদ্ধান্তটাই উর্ধ্বে থাকতে। আপনাকে সে কিচ্ছুটি বলতে পারবে না, কিন্তু কেনো..?
ভালোবাসার সম্পর্ক হোক বা অন্য কিছু ইগোকে কখনোই প্রশয় দিতে নেই। দেখবেন আপনার সাময়িক ইগো, জেদ এর জন্য তার জীবনের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। তখন তার কাছে ফিরে এসেও তাকে আগের মতো হয়তো পাবেন না।
কি হবে প্রিয় মানুষটার কাছে নিজের পার্সোনালিটি লস করলে ? এর জন্য আপনার আত্মসম্মান কমবে না বরং বাড়বে। আমার তোমাকে ছাড়াও চলবে এই চিন্তা না করে বরং এই চিন্তাকে গলা টিপে হত্যা করে বাক্সবন্ধি করে পানিতে ভাসিয়ে দিন, যদি তার সাথেই থাকতে চান, তাকে মন থেকে আসলেই ভালোবেসে থাকেন। কোনো কিছুকে নেগেটিভভাবে না নিয়ে পজিটিভভাবে নিন। দেখবেন আপনার জীবন শান্তিতে ভরপুর, সাথে আপনার প্রিয় মানুষটিরও।